দন্ডকারন্যে উদ্বাস্তু আন্দোলনের ঐতিহাসিক বিজয়"
------------------------------ ----------------
অবশেষে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী ডা রমন সিং উদ্বাস্তু বাঙালিদের দাবী মেনেনিলেন।
***************************** ************
Dr.Subodh Biswas
https://www.facebook.com/hiranmaysarkar07/videos/pcb.334204960247498/1116267035076051/?type=3&theater
https://www.facebook.com/hiranmaysarkar07/videos/pcb.334204960247498/1116273555075399/?type=3&theater
https://www.facebook.com/hiranmaysarkar07/videos/pcb.334204960247498/1116273555075399/?type=3&theater
বিগত ৫ সেপ্টম্বর থেকে ছত্রিশগড়ের পাখানজোরে নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমন্বয় সমিতি র পতাকাতলে বাংলা ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা, জমির পাট্টা ও জাতি প্রমান পত্রের মৌলিক দাবীতে উদ্বাস্তুরা ধারাবাহিক অবস্থান আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল।প্রশাসনের ফিরে তাকানোর সময়নেই। একদিকে বাঙালি বৈমাতৃক বিদ্বেষ নীতি । অন্যদিকে হতভাগ্য আন্দোলন কারিদের পাশে না আছে রাজনীতিক সমর্থন, না আছে প্রশাসনিক ন্যূনতম সহমর্মিয়তা। অন্যদিকে গহীন অরন্যেঘেরা মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চল। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই অঞ্চলটি দেশথেকে বিচ্ছিন্ন হয়েপড়ে । জঙ্গলের বুকচিরে পাখানজোরের পথে আমাদের গাড়ীচলছে।ভয়ে বুকটা দূরু দূরু। আমার সাথী প্রাক্তন কমিশনার বিরাজ মিস্ত্রী কাপা কন্ঠে বলেন, স্বজন দা প্রাননিয়ে ঘরেফিরতে পারবতো ?
অনশন আন্দোলনের আজ তৃতীয় দিন। আমারা রাত্র ১২ টার সময় অনশন স্থলে পৌছাই। সারা ভারতবাসী সুখনিদ্রায় মগ্ন। ঘুমনেই ঘরপোড়া ভিটেহারা দন্ডকারন্যের হতভাগ্য উদ্বাস্তু বাঙালিদের। তাদের সামনে অস্তিত্বের প্রশ্ন।ভারত সরকারের দেওয়া শতবৎসরের পতিত জমিকে উর্বর করে নতুন এক সোনার বাংলা গড়েছে , ছয় দশক পেরিয়ে যাবার পরেও পাট্টা পায়নি। জমি হস্তান্তর করার অধিকার নেই।স্থানিয় অধিবাসীরা বুলি আওড়ায়, ভারত সরকারের দেওয়া জমির লিজের সময় সীমা পেরিয়ে গেছে। তোমাদের জমি খালিকরতে হবে। সে এক অঘোষিত সন্ত্রাস। আবার ভিটে ছাড়তে হবেনাতো ?
বহির বঙ্গে উদ্বাস্তুরা ৮০ % প্রতিশত তপশীলী।আসাম পশ্চিমবঙ্গ সহ আঠ রাজ্যে তারা তপশীলী স্বীকৃতি পায় । ছত্রিশগড় সহো বাকী দশ রাজ্যে সে স্বীকৃতিটুকু তাদের নেই। তপশীলিরা আত্মপরিয় হারিয়ে ফেলেছে। আধুনিক শিক্ষা তাদের কাছে অলিক স্বপ্ন।এমনকী নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষা আধো আধো বলতে পারলেও , বাংলা অক্ষরগুলো তাদের কাছে জাপানি হরফের মতো। তাদের সামনে বাঙালিত্ব হারানোর সংকট।
বিগত ২৮ দিনের ধর্না আন্দোলন প্রশাসন উপেক্ষা করলেও আন্দোলন কারিরা ময়দান ছাড়লেন না। তারা রনকৌশল বদলে নিলেন, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ধর্না অবস্থান প্যান্ডেলে বারোজন আন্দোলন কারী অমরন অনশনে বসেন। তৎমধ্যে ৭৫ বৎসরের শ্রীমতী দুলিরানী হালদার অনশনে অংশগ্রহন করাতে প্রশাসনের ব্লাডপ্রেসার বেড়ে যায়।কমিটি জানিয়েদেয় পাখানজোর অঞ্চলের ১৩৩ গ্রামের প্রতিপরিবার থেকে একজন করে আন্দোলনের সমর্থনে অংশগ্রহন করবে। বিভিন্ন জেলাথেকে দলে দলে বাঙালিরা আসতে থাকে। বক্তাগনের কন্ঠে তাদের প্রতি ছয়দশকের বঞ্চনার তিব্রপ্রতিবাদ ধ্বনিত হয়। করতালির শব্দে আকাশ বাতাস কেপেওঠে। ২৪ ঘন্টা বাংলা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলতে থাকে। না আছে ক্ষুধা না আছে ক্লান্তি, না আছে ভয়। রাত্রভর স্বরচিত গান, কবিগান ,হরিসংকীর্তন, বাউল, ভাটিয়ালি পল্লীগীতির মাতোয়ারা শুর আন্দোলন কারিদের বেধেরাখতে জাদুরকাজ করে।
আন্দোলন কারিদের নিয়ন্ত্রন করতে পাখানজোর শহর পুলিশ ছাউনিতে বদলে যায়।অনশনের তৃতীয় দিন, গভীর রাত্রে পুলিশ গাড়ীর সাইরেন বিকট শব্দ।পুলিশ অনশর কারিদের তুলেনিয়েযাবে। সংবাদটি বিদ্যূতের মতো ছড়য়ে পড়ল। অবস্থা বেগতিক বুঝে রাত্র ২ টায় সর্বভারতীয় সভাপতি ডাক্তার সুবোধ বিশ্বাস মাইকে ঘোষনা করেন, আমাদের সামনে অগ্নী পরিক্ষা। আন্দোলনের আজ কালোরাত। জীবন দেব, অনশন কারিদের নিয়েযেতে দেবনা। বিশ্বাস বাবুর ঘোষনা আন্দোলন কারিদের রক্তে আগুন ধরিয়ে দিল। হাজার হাজার মহিলারা কোমরে কাপড় বেঁধে অনশন কারিদের বেডিগেট করে ঘিরেফ্যালে। সভাপতি অসীম রায়, বাঘের মতো লাফ দিয়ে মাইক্রফোন হাতে নিয়ে জানিয়ে দিলেন, মৃত্যু যখন অনিবার্য, আমরা কাউকে ভয় পাইনা।অধিকারের জন্য আমরা প্রান দেবো, পিছব না।মনোজ মন্ডলের ভাষনে গর্জে উঠল আন্দোলন কারিরা। তপন রায়, জগবন্ধু বিশ্বাস বিকাশ পাল ,রবি গোষাই ,সুপ্রকাশ মল্লীক ,মুন্না ইন্দ্রজীৎ , বুদ্ধদেব সরকারের ভাষনে ষাঠ বৎসরের ঘুমিয়ে থাকা বাঙালির ঘুম ভেঙ্গেগেল। সারা রাত্র হাজার হাজার মানুষ প্রহরিরমতো পাহারাদিল অনশন কারিদের। সংগঠনের প্রতিটি কর্মী মনেহোল সিংহ শাবক।। আন্দোলন ভঙ্গ করার প্রশাসনের সবরকম ষড়যন্ত্রকে উদ্বাস্তুরা হারমানিয়ে দেয়।অনশনে প্রথম দিনে, আন্দোলন কারিদের উপস্থিতি ছিল সাত হাজারের মতো। দ্বিতীয় দিনে উপস্থিতি ছিল ১৫ হাজারের কাছা কাছি । তৃতীয় দিন ২৫ হাজার ও চতুর্থ দিনে বেড়ে দাড়ায় ৪০ হাজারের মতো। পঞ্চম দিনে লক্ষাধিক মানুষের জনস্রোতে পাখানজোর শহরটাই ডুবেযায়।
অনশনের সমর্থনে পাখানজোর অঞ্চলে যাতায়েত ব্যবস্থা থমকে যায়। বাংলাভাষী বিদ্যার্থীদের স্কুল বহিস্কারে দুই শতাধিক স্কুল অকেজ হয়েপড়ে । বিগত একসপ্তাহ যাবত দোকান পাঠ বন্দ। অনেকের বাড়ীতে উনুন জ্বলছেনা,তবুও কারো প্রতিবাদ নেই। শত শত শিক্ষক রাত্রি ব্যবস্থার দায়িত্ব কাধেতুলে নিয়েছেন। গ্রামপ্রধান ,অঞ্চল প্রধানরা বিগত একমাসধরে মাটি কামড়ে পড়েআছে। মা যেমন অসুস্থ্য শিশুকে রাতজেগে পাহারাদেয়, তদরুপ পুত্রস্নেহে হাজার হাজার মা বোনেরা পাঁচদিন পাঁচরাত অনশনকারীদের পাশেবসে কাটালেন। স্বাধীন ভারতে কোন আন্দোলনে মহিলাদের এরুপ ভূমিকা বিরল।
-------
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ৫ অক্টোবর মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং সাংসদ শ্রী বিক্রম হোসেন্ডী , বিধায়ক শ্রী নাগরাজ ভোজ শ্রী মন্তুরাম পাওয়ার এবং কালেকটরকে মধ্যস্থতার করার জন্য ঘটনস্স্থলে পাঠান। কালেক্টরের প্রস্তাব কমিটি অস্বীকার করে।কালেক্টর ফিরেযায়।
সাংসদ বিক্রম হুসেন্ডী,এবং বিধায়ক ভোজরাজ নাগ, মন্তুরাম পাওয়ার সংগে কমিটি আলোচনায় বসে। কমিটি পক্ষথেকে প্রস্তাব রাখাহয়, একমাত্র মুখ্যন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পেলেই অনশন ভঙ্গ করাহবে। মাননীয় মুখ্যন্ত্রী আন্তরিকতা দেখান। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অমরন অনশন আন্দোলন ৬ অক্টোবর ২০১৬ স্থগিত হয়। ।সমিতির রাষ্ট্রিয় অধ্যক্ষ ডা সুবোধ বিশ্বাস ১২ জন অনশন কারিদের সরবত খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করেন।
যেসব সমাজ বিপ্লবীরা নিজের জীবনকে উপেক্ষাকরে অমরন অনশনে বসেছিলেন, তাদের মধ্যে আছেন: (১) অসীম রায়,(সভাপতি) মনোজ মন্ডল (সচীব) (৩)শ্রীমতী দুলী রানী হালদার(৪)ইন্দ্রজীৎ বিশ্বাস(৫) রবীন্দনাথ সরকার (গোষাই) ( ৬) মিহির রায় (৭)দ্বীপক মন্ডল (৮) বিশ্বজীৎ বৈরাগী(৯)ভুবন বাডৈ (১০) উত্তম সিকদার (১১) কিশোর সিকদার (১২) বাদল মন্ডল।
৭ অক্টোবর রায়পুরে সমিতির প্রতিনিধিদের সংগে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। অসীম রায়, মনজ মন্ডল সমদ্দার ও জগবন্ধু বিশ্বাস প্রস্তাব রাখেন।মাতৃভাষা ও জমির পাট্টা/ জমি হস্তান্তর করার দাবী মুখ্যমন্ত্রী মেনেনেন।জাতিপ্রমান পত্রের দাবী (SC) বাস্তবায়নের জন্য সাত সদস্যের কমিটি গঠন করার ঘোষনা করেন।যেসব রাজ্যে উদ্বাস্তু তপশীলী বাঙালিরা জাতিপ্রমান পত্রের সুযোগ পাচ্ছে, সেসব রাজ্যের সার্ভে রিপোর্ট তিনমাসের মধ্যে ছত্রিশগড় সরকারকে জমাদেবে। রিপোর্টের ভিত্তিতে নতুন করে Ethnographic রিপোর্ট তৈরীকরে রাজ্য সরকার কেন্দ্র সরকারকে সুপারিশ পত্র পাঠাবেন। আন্দোলনের প্রথম ধাপে উদ্বাস্তুরা জয়ী হয়েছে। এ বিজয় কেবল ছত্রিশগড়ের ২০ লাখ উদ্বাস্তু বাঙালির জয় নয় । সমগ্র বাঙালির জাতির জয়। আন্দোলন কারিদের । যুগ যুগ ধরে এখানের বাঙালিরা বাংলা ভাষা সংস্কৃতি ও বাঙালিত্ব নিয়ে গৌরবের সংগে মাথাউচুকরে বেচেথাকতে পারবে।
সমস্ত ধর্ম বর্ন এবং রাজনীতিক দলের খোলস ভেঁঙ্গ বাঙালিরা জাতির সার্থে এক মঞ্চ সবাই আসতেপেরেছে এটাই বড়োউপলব্দী।
No comments:
Post a Comment