Tuesday, November 10, 2015

দীপদানোৎসব সর্বোসত্তার মঙ্গলোৎসবঃ Saradindu Uddipan

দীপদানোৎসব সর্বোসত্তার মঙ্গলোৎসবঃ 
দীপদানোৎসব একটি প্রচলিত প্রাচীন ভারতীয় অসুর উৎসব। আদীভারতীয় জনপুঞ্জের মধ্যে এই উৎসব এক সার্বজনীন মঙ্গলোৎসব হিসেবে পালিত হত। সর্বোসত্তার মঙ্গলপূর্ণ সহাবস্থানই এই পরবের মূল বার্তা। এখনো পৃথিবীর আদিভাষার জনক কোলভাষী সাঁওতাল সমাজের মধ্যে এটি “সহরায়” পরব হিসেবে পালিত হয়। এই সময় চৈত্যভূমি(স্তুপ, থান), কুলি এবং ঘর-দোর থেকে সমস্ত আবর্জনা সরিয়ে, ঘরের দেয়ালে দেয়ালে বিচিত্র আলপনা দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়। কুড়মি সমাজের মধ্যে এই পরবকে বলা হয় “বাদনা পরব”। বাদনা পরব আসলে অসুর রাজা শিব এবং কৃষ্ণের “গোবর্ধন” বা গো-বন্দনা পূজার অংশ।
হরপ্পা ও মহেঞ্জোদড়ো সভ্যতায় প্রাপ্ত নানা প্রকার পোড়া মাটির শিল থেকেও এই গো-বন্দনার বহু নিদর্শন পাওয়া যায়। পুরাণাদি ব্রাহ্মন্যবাদি শাস্ত্রে অসুর তেহার হিসাবে এই উৎসবের উল্লেখ রয়েছে।
প্রাচীন ভারতীয় বর্ষপুঞ্জি মতে কার্ত্তিক মাসের ঘনঘোর অমাবস্যায় কালরাত্রির অবসান ঘটে। বৌদ্ধশাস্ত্র মতে এই ঘনঘোর অন্ধকার অজ্ঞানতার প্রতীক। তাই তাকে দূর করার জন্য জ্ঞানশিখা প্রজ্বলিত করে আর একটি মঙ্গলময় কালচক্কযানের বন্দনা করা হয়।
সম্রাট অশোক মহামতি গোতমা বুদ্ধের ৮৪ হাজার দেশনার স্মারক হিসেবে সারা পৃথিবীর নানা দেশে ৮৪ হাজার শিক্ষাকেন্দ্র, চৈত্যভুমি, স্তুপ, চিকিৎসালয়, পান্থশালা, জলাধার প্রভৃতি তৈরি করে জীবের কল্যাণে উৎসর্গ করেন। নগর, গিরি, কানন, বিহার, চৈত্যভুমি প্রভৃতিকে দীপের শিখায় প্রজ্বলিত করে তোলা হয়। সম্রাট অশোক নিজে পাটলী পুত্রের অশোকারাম বিহারে ৮৪ হাজার প্রদীপ জ্বালিয়ে সমতামূলক ন্যায়যুগের সূচনা করেন। মহাভিক্ষুদের কন্ঠে উচ্চারিত হয় এক চিরন্তন মঙ্গল বার্তাঃ সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্তু।
সব্বে সত্তা আভেরা হোন্তু।
সব্বে সত্তা ওব্বপজ্জা হোন্তু।
সব্বে সত্তা আনিঘা হোন্তু ।
সব্বে সত্তা সুখি আত্তান পরিহরন্তু ।

No comments:

Post a Comment