Sarita Ahmed
ইরম শর্মিলা চানু , দেড় দশকের এক অমানুষিক প্রতিবাদের 'নাম' ।
কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরের অনশন ভেঙ্গে আজ তিনি বুঝছেন, তাঁর কঠিন বিদ্রোহী সত্ত্বা , জীবনভর সংগ্রামের মানসিকতা তাঁকে 'লৌহ মানবী' আখ্যায়িত করলেও, সাধারণ মানুষের কাছে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার তিনি হারিয়েছেন ।
কিন্তু দীর্ঘ ১৬ বছরের অনশন ভেঙ্গে আজ তিনি বুঝছেন, তাঁর কঠিন বিদ্রোহী সত্ত্বা , জীবনভর সংগ্রামের মানসিকতা তাঁকে 'লৌহ মানবী' আখ্যায়িত করলেও, সাধারণ মানুষের কাছে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার ও স্বাভাবিক জীবনযাপনের অধিকার তিনি হারিয়েছেন ।
এ এক নিষ্ঠুর পরিহাস ।
যে মানুষগুলো এতদিন ধরে তাঁকে শিখন্ডি বানিয়ে রাজনৈতিক -সামাজিক ফায়দা তুলেছেন , নানা প্রতীকি ক্যাম্পেনে তাঁর নাম ভাঁড়িয়ে দাবীদাওয়া তুলেছেন , সেই তাঁকেই আজ কার্যত 'আশ্রয়হীন' হয়ে পড়তে হয়েছে একটা সিদ্ধান্তের জন্য ।
---- '১৬ বছরের অনশন ভঙ্গ ও রাজনীতিতে নেমে আফস্পার বিরুদ্ধে লড়াই করার ইচ্ছেপ্রকাশ ।'
---- '১৬ বছরের অনশন ভঙ্গ ও রাজনীতিতে নেমে আফস্পার বিরুদ্ধে লড়াই করার ইচ্ছেপ্রকাশ ।'
--- এটাই নাকি মনিপুর মেনে নিতে পারছে না ।
মানে যদ্দিন তুমি নাকে নল , পেটে আলসার নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে অর্ধমৃত হয়ে টিকেছিলে তদ্দিন তোমায় নমোঃ করেছি, অনশন তোলার জন্য লোকদেখানি দাবী করেছি । তোমায় নিয়ে রংচঙে কমিটি / সমিতি গঠন করেছি , এমনকি দেশজোড়া একখান এপিথেট 'লৌহ মানবী' দিয়ে প্রচার ট্রচারও সেরেছি, তাতে আফস্পা উঠুক না উঠুক তোমায় নিয়ে 'খবর' বানানো গেছে । সবই মানা যায় । কিন্তু এত কিছুর মানেই তো এটা নয় যে, তোমার সাধারণ জীবন যাপনের স্বাধীনতা আমরা দিয়েছি ।
কারণ তোমার অনশন, তোমার জেদ, তোমার দিল্লী তোলপাড় করা ইস্পাত কঠিন সংগ্রাম -- এসবই মনিপুরের USP. ...খবরে রাখতে হবে মনিপুরকে । আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে কামাতে হবে মোটা ফান্ড। তার জন্য 'নাকে-নল শর্মিলা'কে চাই। চাই তাঁর ১৬ বছরের অদম্য লড়াইয়ের কাহীনিকে। ইমোশানাল অত্যাচারের একটা জবরদস্ত প্লট না হলে পাবলিক খাবে না ,তাই একটা একটা করে বছর গেছে, আমরা গুনেছি। 'আফস্পা' নীতির খবর আপডেট না হলেও ইরমের অনশনের অ্যানিভার্সারি-পালন দেশ দেখেছে । না খেয়েও অটূট মনোবলকে এমন ধারা বাঁচিয়ে রাখার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত ভূ-ভারতে আর কোথাও মিলেছে ??
যে মুহুর্তে তুমি অনশন ধর্নায় বসেছ সেই ২০০০ সাল থেকে , সেই মুহুর্তেই তুমি পাবলিক প্রপার্টি হয়ে গেছ , শর্মিলা । তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসের হিসেব এখন নাগরিক সমাজ ঠিক করে । ডিসিশান নেওয়ার ক্ষমতা তোমার মত জ্যান্ত লাশের থাকতে পারে না । তাই ফিরতে চাইলেও , সে পথ রুদ্ধ তোমার জন্য। তুমি ফিরে যাও সেই নেহেরু হাসপাতালে ৮ / ১০ এর কুঠুরিতে , ফিরে যাও নাকে-নল চেহারায় । আমরা 'পাশে থাকব' ।
কিন্তু রাজনীতিতে লড়ার ইচ্ছে কদাপি বরদাস্ত করব না । তারজন্য তো লাইনে আছে ঘুষ খেকো নেতা, তোলাবাজ গুণ্ডা, চোর আমলা সবাই । তুমি কেন খামোকা স্বচ্ছ ইমেজ নিয়ে লড়তে আসবে ! এ জায়গা তোমার নয় , তোমার ওই হাস্পাতালই ঠিকানা হোক।
কিন্তু রাজনীতিতে লড়ার ইচ্ছে কদাপি বরদাস্ত করব না । তারজন্য তো লাইনে আছে ঘুষ খেকো নেতা, তোলাবাজ গুণ্ডা, চোর আমলা সবাই । তুমি কেন খামোকা স্বচ্ছ ইমেজ নিয়ে লড়তে আসবে ! এ জায়গা তোমার নয় , তোমার ওই হাস্পাতালই ঠিকানা হোক।
--- ----- ------- --------
*** মনিপুরের রাজনৈতিক বা ইমোশানাল সমীকরণ আমার জানা নেই । কিন্তু এটুকু হৃদয় দিয়ে বুঝছি , অনশন তুলে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চাওয়া ইরম এখন এটুকু জীবন দিয়ে অনুভব করতে পারছেন যে, গাঁধির মৃত্যুর সাথে সাথেই মৃত্যু হয়েছিল দেশজ 'অহিংস আন্দোলনে'র ।
এদ্দিন তাঁর গান্ধীবাদি অহিংস প্রতিবাদ তাই পুরোটাই পণ্ডশ্রম হয়েছে। 'আফস্পা আইন' বহাল তবিয়তে দেশে রয়েছে , সেনার হাতে আজও অত্যাচারিত হচ্ছে সীমান্তবর্তী লোকজন । উলটে, তাঁর অনশনে অনড় থাকার পণ তাঁর নিজেরই ক্ষতি করেছে ষোল আনা । ব্যক্তিগত ভাবে- শারীরিক ভাবে - মানসিকভাবে সব দিক থেকেই ।
এদ্দিন তাঁর গান্ধীবাদি অহিংস প্রতিবাদ তাই পুরোটাই পণ্ডশ্রম হয়েছে। 'আফস্পা আইন' বহাল তবিয়তে দেশে রয়েছে , সেনার হাতে আজও অত্যাচারিত হচ্ছে সীমান্তবর্তী লোকজন । উলটে, তাঁর অনশনে অনড় থাকার পণ তাঁর নিজেরই ক্ষতি করেছে ষোল আনা । ব্যক্তিগত ভাবে- শারীরিক ভাবে - মানসিকভাবে সব দিক থেকেই ।
#লৌহ_কন্যার প্রতি মনিপুরবাসীর এহেন আচরনের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি । অবিলম্বে ওনার প্রাপ্য স্থান ও স্বাভাবিক জীবন, সংবিধানের 2 article 'Right to live' ('বাঁচার অধিকার) ভিত্তিতেই ফিরিয়ে দেওয়া হোক ।
'আন্দোলন জীবনের স্বার্থে। জীবন আন্দোলনের স্বার্থে নয়। সত্যাগ্রহের স্বার্থে দীর্ঘদিন স্বাভাবিক জীবন থেকে বিমুখ থাকার পরও যখন মণিপুরকে স্বাভাবিক জীবন দেওয়া গেল না, শর্মিলা তখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে এক অন্য পদ্ধতিতে লড়তে চাইছেন। সমর্থন করুন বা না করুন, এতে তাঁকে বাধা দেওয়ার অধিকার কারওর নেই।'
মনিপুর ভুলো না, যে আন্দোলন তার নেতাকে ছাপিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, লক্ষ্যে পৌঁছনো তার পক্ষে খুব শক্ত।
No comments:
Post a Comment