প্রসঙ্গঃরাধা কৃষ্ণ অভিসার
নাই বা ভিজিল বেণী,বসন্ত আসিল কি আসিল না,পদ্মবনে নেগেছে আগুন,ক্ষণিকের সে দেখা কি শেষ দেখা হয়?
পলাশ বিশ্বাস
ভোট ব্যান্কের অন্ক গণিতের পরোয়া জনগণ কোনো দিন করে নি।রাজনীতি আম জনতাকে যত ভ্যাবলা কান্ত পাঁচি দাসি ভাইব্যা বইস্যা আছেন,ততটা কক্ষনো নয়।
তেনাদেরও জনসমর্থন কম ছিল না,ভোটের অন্কও আছিল অটুট,সেই তেনারিই ভূত হইলেন।
ইনারা অজেয় দুর্গের পরিখায় নিজেরাই স্বখাত সলিলে নিমজ্জিত হইার বাসনায় আকুলু ব্যাকুলি ধরাকে সরা মনে কইরা ভাবছেন যে এক আধটু ক্যালানি,এক আধটু ধর্মীয় ফুচকা ও তেঁতুল জল দিয়া ক্ষমতায় মৌরুসী পাট্টা কিনিয়া বইস্যা আছেন।
তেনাদের সব অন্ক ভন্ডুল হইল।তাসের ঘরের মত লালকেল্লা ধ্বসিয়া ফাটানো ফানুষ।
জনগণের হাতে তুরুপের তাশ।
যতই না মেরুকরণে দাঙগাবাজ রাজনীতি কর বাছাধন,জনগণ যে তলায় তলায় কার পক্ষে জোট বাঁধতাছেন সে কোনো সার্ভে বা চ্যানেল প্যানেলের পন্জিকা মোতাবেক না হওনের কথাই।
এক যে ছিলেন রাধিকে,তাহার হাবু ডুবু পিরেমের কেস্সা শিবের বাবারও জানার কথা ছিল না।
ঔ ব্যাটা নচ্ছার জয়দেব গীত গোবিন্দমে প্রতিক্ষণ অভিসারের দিনলিপি এমন রাইকা গ্যাচিন যে দশ দিগন্তে রাধা কৃষ্ণ অভিসার ব্যাতিরেক জয় শ্রী রাম ছাড়া আর কিই বা আছে।
উত্তম সুচিত্রার জুটিতে ঔ খুল্লমখুল্লা প্রেমের ঔদ্ধত্য নাই বা থাকিল,বাঙালির সেরা রোমান্স উহাই।
এখন একটি জুটি জুতসই সিনেমার বাইরে সর্ব জনসমক্ষে ক্রমশঃ প্রকাশিত হইতাছে।
অভিসার ঘনঘোর।
তবু ভাবতাছেন যে পাবলিক টেরটি পাইব না।
পাবলিকও রোজ রোজ ক্যাপসুল মাহাত্মের খবরের শিরোনামে খাট ভাঙ্গা দ্যাখতে দ্যাখতে জযদেবের বাবা হইতাছেন।
নাই বা ভিজিল বেণী,বসন্ত আসিল কি আসিল না,পদ্মবনে লেগেছে আগুন,ক্ষণিকের সে দেখা কি শেষ দেখা হয়?
গোপন সে যতই গোপনীয়,তাহা কি গোপন থাকে?
একূল দুকূল গোকুল থাকলেই হয়,হবে কি?
যাহারা জোটবাঁইধা অন্ক মিলাইতেছেন,পুরাতন হিসাবের খাতায় টোখ বুলাইলেই মঙ্গল।
দ্বাদশ পরিচ্ছেদ
অভিসার
চণ্ডীদাসের গানে অভিসারের পদ একরূপ নাই বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না, অথচ বহুপূবর্ববর্ত্তী জয়দেবের পদে তাহা আছে। অলঙ্কারশাস্ত্রে ‘অভিসারিকা’ সম্বন্ধে অনেক নিয়ম ও রীতির উল্লেখ দৃষ্ট হয়। প্রোষিতভর্ত্তৃকা, খণ্ডিতা, কলহান্তরিতা সম্বন্ধেও অনেক আইনকানুন আছে। প্রোষিত-ভর্ত্তৃকা একবেণীধরা হইবেন, অভিসারিকা আঁধারে গা ঢাকা দিবার জন্য নীলাম্বরী পরিবেন, নূপুর ত্যাগ করিয়া নিঃশব্দে পথে চলিবেন, ইত্যাদি। কিন্তু চণ্ডীদাস নিজের মনে চলিয়াছেন, তিনি অলঙ্কারশাস্ত্রের প্রতি মোটেই লক্ষ্য করেন নাই। একটি সুবিখ্যাত পদে তিনি কৃষ্ণের অভিসার বর্ণন করিয়াছেন। প্রাচীন পল্লী-গীতিকায়ও আমরা “মহিষাল বঁধুর” অভিসার ও “ধোপার পাটে” রাজকুমারের অভিসারের সঙ্গে পরিচিত হইয়াছি। এই শেষোক্ত প্রণয়ীর অভিসার যে-ভাবে বর্ণিত হইয়াছে, তাহা অনেকটা চণ্ডীদাস-বর্ণিত “এ ঘোর যামিনী মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে” প্রভৃতি পদের অভিসারের মত। চণ্ডীদাসের এই পদটির সমালোচনা-কালে রবীন্দ্রনাথ বহুপূর্ব্বে ইহার গূঢ় অর্থ বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইয়াছিলেন। তিনি কতকটা এই ভাবে কবির কবিত্ব ও রচনানৈপুণ্য বুঝাইয়াছিলেন, (সকল কথা আমার মনে নাই ও সেই সমালোচনাটিও এখন সুলভ নহে)। কবি তাঁহার কথার ফাঁকে এমন সকল কথা বলিয়াছেন যে, তদ্দ্বারা বুঝা যায়—রাধার বলিবার উদ্দিষ্ট এক ব্যক্তি নহে। তিনি কখনও কৃষ্ণকে, কখনও সখীকে, কখনও বা নিজেকেই নিজে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন, অথচ কাহাকে তিনি সম্বোধন করিতেছেন, তাহা স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই।
আমরা তদ্রচিত “কাহারে কহিব মনের মরম, কেবা যাবে পরতীত” পদের আলোচনা-কালে বলিয়াছিলাম, কবির কথায় অনেক ছেদ থাকে, তিনি সমস্ত কথা বলেন নাই; যাহা বলিয়াছেন, তাহা ছাড়া অনেক ইঙ্গিত করিয়াছেন—সমঝ্দার পাঠক সেই সকল ফাঁক পূর্ণ করিবেন। এখনকার কাব্যক্ষেত্র অনেক সময়ে বাক্পল্লব ও আগাছায় পূর্ণ, সেক্ষপীয়রের “Brevity is the soul of wit” নীতি-পালনের লোক খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন। কিন্তু চণ্ডীদাস যখন ভাবে আবিষ্ট হইয়া যাইতেন, তখন গূঢ় অনুভূতির দরুণ বাজে কথা, এমন কি বক্তব্য বিষয় বুঝাইবার পক্ষে যাহা কতকটা দরকার, তাহাও তাহার বলিবার একান্ত অবসর হইত না।
‘‘এ ঘোর রজনী মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে?’’
এ কথাটা রাধা স্পষ্টই কৃষ্ণকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন। তাহার পরে যেন মুখ ফিরাইয়া সখীকে বলিতেছেন—
‘‘আঙ্গিনার মাঝে বঁধুয়া ভিজিছে, দেখে যে পরাণ ফাটে।’’
তারপর জনান্তিকে বলিতেছেন—
‘‘ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ, বিলম্বে বাহির হৈনু।’’
এবং আবার কৃষ্ণকে সম্বোধন করিয়া বলিতেছেন—
‘‘আহা মরি মরি সঙ্কেত করিয়া কত না যাতনা দিনু।’’
তারপর পুনশ্চ সখীর প্রতি—
“বঁধুর পীরিতি আরতি দেখিয়া, মোর মনে হেন করে,
কলঙ্কের ডালি মাথার করিয়া, অনল ভেজাই ঘরে।
আপনার দুঃখ, সুখ করি মানে, আমার দুঃখের দুঃখী,
চণ্ডীদাস কহে কানুর পীরিতি, শুনিয়া জগৎ সুখী।”
|
এই পদটিতে একটা প্রচ্ছন্ন নাট্যকৌশল উপলব্ধ হইবে। রাধা ঘুরিয়া ফিরিয়া বারংবার মুখ ফিরাইয়া যাহা বলিতেছেন, কবি যেন তাহা মানস-কর্ণে শুনিতেছেন এবং মানস চক্ষে সে দৃশ্য দেখিতেছেন; তিনি যাহা শুনিতেছেন বা দেখিতেছেন, তাহাই বলিয়া যাইতেছেন। আত্মবিস্মৃত কবি ভুলিয়া গিয়াছেন যে, তাঁহার কথা শুনিবার জন্য বাহিরের লোক কাণ পাতিয়া আছে, তাহাদের জন্য পরিচয়ের ভূমিকাটার দরকার ছিল। এই সম্পূর্ণ আত্মস্থভাব শুধু মহাকবিদের মধ্যেই দেখা যায়। বাল্মীকির রামায়ণে এইরূপ দৃষ্টান্ত মাঝে মাঝে আছে। এমনও হইতে পারে যে, যাঁহারা সেকালে চণ্ডীদাসের গান গাইতেন, তাঁহারা অঙ্গুলী-সঙ্কেত ও অঙ্গভঙ্গী দ্বারা কবির অকথিত কথাগুলি পূরণ করিয়া বুঝাইতেন।
ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে আমার অভিসারিকাদের সম্বন্ধে কথা হইয়াছিল। তিনি বলিয়াছিলেন, “আমাদের দেশে পুরুষেরাই নায়িকার কাছে যায়। নায়িকারা কখনই এ-ভাবে মিলনের জন্য অভিসারে যাত্রা করেন না। এই রীতি নারী-প্রকৃতির স্বাভাবিক লজ্জাশীলতার বিরোধী।” উত্তরে আমি বলিয়াছিলাম—“যে-দেশে নারী ও পুরুষ স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করেন এবং একে অন্যের কাছে যখন-তখন যাওয়া-আসা করিতে পারেন, সেখানে পুরুষের যাওয়া ঠিক ও সঙ্গত; কিন্তু আমাদের অন্তঃপুরের অবরোধের মধ্যে পুরুষের প্রবেশ অসম্ভব। পুরুষ কি করিয়া কোন নারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিবে? সুতরাং নারীকেই সংগোপনে চুরি করিয়া বাহির হইতে হয়—ভ্রমরের সন্ধানে ফুলকেই বাহির হইতে হয়।”
অভিসারের অধ্যায় বৈষ্ণব কবিতা-রত্নমালার মধ্যমণি-স্বরূপ। বিদ্যাপতি অভিসারের অনেকগুলি পদ লিখিয়াছেন, তাহা অলঙ্গারশাস্ত্রের অনুবর্ত্তী শব্দচ্ছন্দ ও ভাবের ঐশ্বর্য্যে ঝলমল—
‘‘জিনি করিবর রাজহংস-গতি গামিনী চললহি সঙ্কেত গেহা।
অমল তড়িতদণ্ড হেমমঞ্জরী জিনি অতি সু্ন্দর দেহা।
কনকমুকুর শশী কমল জিনিয়া মুখ বিম্ব-অধর পবারে।
দশনমুকুতাপাঁতি কুন্দ করগ বীজ জিনি কুম্বু কণ্ঠ-আকারে।’’
|
এই ভাবে পদের পর পদ চলিয়াছে, অলঙ্কারে বোঝাই যেন একখানি পান্সী নৌকা চলিয়াছে। শব্দগুলি শ্রুতির চমকপ্রদ, কিন্তু সংস্কৃত শব্দের বাহুল্য ও উপমা-উৎপ্রেক্ষা যেন অভিসারিকার গতি কতকটা রোধ করিয়া ফেলিয়াছে। চৈতন্যপ্রেমের বন্যায় কিছু পরে অভিসারিকার ডিঙ্গি আশ্চর্য্য গতিশীলতা লাভ করিয়াছিল।
প্রেমের জন্য অভিসার কি, তাহা চৈতন্যদেব বুঝাইয়া দিলেন। ঘর বাড়ী, আত্নীয় স্বজন—সমস্ত ত্যাগ করিয়া প্রেমযাত্রী কি ভাবে অভিসার করেন, তাহার একখানি সুস্পষ্ট পট কবিরা এবার চোখের সামনে দেখিতে পাইলেন। সে প্রেম-যাত্রীর রূপ কি কখনও ভোলা যায়? সংকীর্ত্তনের মধ্যে যে পরমানন্দের মূর্ত্ত-রূপ তাঁহারা দেখিলেন, তাহা তাঁহাদের হৃদয়ে ভাবোচ্ছ্বাস বহাইয়া দিল। বৈষ্ণব কবিরা এই অভিসারের রূপক দিয়া চৈতন্যকে যতটা বুঝাইয়াছেন, তাঁহার চরিতকারেরা তাহা পারেন নাই। এখানে রাইকিশোরীর মূর্ত্তি যেরূপ ফুটিয়াছে, বৈষ্ণব কবিতায়ও অন্য কোন স্থানে তাঁহার রূপ তদ্রুপ ফোটে নাই। এজন্য বৈষ্ণবেরা অভিসারের নাম রূপাভিসার দিয়াছেন। যিনি রূপের ফাঁদে পা দিয়া, সেই আনন্দ-স্বরূপের সন্ধানে যাইতেছেন, তিনি প্রেমিকের চক্ষে অপূর্ব্ব রূপসী। রাধা এজন্য বলিতেছেন:—
‘‘তোমার গরবে, গরবিনী হাম, রূপসী তোমার রূপে।’’
রমণী-মণি শ্যাম-অভিসারে যাইতেছেন, মুখখানি পূর্ণেন্দুর মত—
‘‘একে সে তরুণ ইন্দু, মলয়জ বিন্দু বিন্দু,
কস্তুরী-তিলক তাহে রাজে,
পিঠে দোলে হেম ঝাপা, রঙ্গিয়া পাটের খোঁপা,
নাসার মুকুতারাজি সাজে।”
|
“শ্যাম-অভিসারে চলু বিনোদিনী রাধা,
নীলবসনে মুখ ঝাঁপিয়াছে আধা।
সুকুঞ্চিত কেশে রাই বাঁধিয়া কবরী,
কুন্তলে বুকলমালা গুঞ্জরে ভ্রমরী।
|
নাসার বেশর দোলে মারুত-হিল্লোলে,
নবীন কোকিলা যেন আধ-আধ বোলে।
আবেশে সখীর অঙ্গে অঙ্গ হেলাইয়া
বৃন্দাবনে প্রবেশিল শ্যাম জয় দিয়া।’’
|
অভিসার বর্ণনা করিতে করিতে কবি অনন্ত দাস চৈতন্যের ভাবে আবিষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন। কারণ সে রাধা রূপক হইলেও, চৈতন্যেরই রূপ। অনন্ত দাস চৈতন্যের সমসাময়িক কবি, সংকীর্ত্তন-কালে তাঁহারই মুখ দেখিয়া অভিসারিকাকে আঁকিয়াছেন। অনন্ত দাস সংস্কৃতে সুপণ্ডিত ছিলেন, কিন্তু সেই রুপ দেখিয়া তিনি অলঙ্কারশাস্ত্র ভুলিয়া গেলেন। এই শাস্ত্রের নির্দ্দেশে মুখর নূপুর পা হইতে খুলিয়া ফেলিয়া নিঃশব্দে যাইতে হয়; (“মুখরমধীরং ত্যজ মঞ্জীরং”)—কিন্তু কবি লিখিলেন, “চৌদিকে রমণী সাজে, ডম্ফ রবাব বাজে”—সমস্ত আইন-কানুন উলটপালট হইয়া গেল, প্রেমযাত্রী এখানে রণ-যাত্রীর ন্যায় নির্ভীক; কলঙ্কের ভয় আর নাই—ডম্ফ, রবাব, রামশিঙ্গা বাজাইয়া চলিয়াছেন। ডম্ফ, অর্থাৎ জয়ঢাক, এত বড় এই যন্ত্র যে, একজন পিঠে বহে আর একজন বাজাইতে বাজাইতে যায়, তাহার প্রবল শব্দে দশদিক্ প্রকম্পিত হয়। এক কবি রাধার মুখে বলিতেছেন “ননদিনী তুই বল্ গিয়ে নাগরে, ডুবেছে রাই রাজ-নন্দিনী কৃষ্ণপ্রেম-কলঙ্ক-সাগরে।” অলঙ্কারশাস্ত্রের ক্ষীণপ্রাণা ভীরু অভিসারিকা এত জোর পাইবে কোথা হইতে? অভিসারিকার আর এখানে সে-যুগের ভয়-শঙ্কিতা মূর্ত্তি নাই, এই যুগের অভিসার অর্থ কৃষ্ণপ্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত, কৃষ্ণ-প্রেমে গর্ব্বিত চৈতন্যের সংকীর্ত্তন, যাহারা কাজীর ফৌজের মাথায় ঢিল ছুঁড়িয়াছিল।
মনে হইতে পারে—সাম্প্রদায়িক ধর্ম্মের কথা এতটা স্পষ্ট করিয়া বলাতে কবিত্বের দিক্ হইতে কবি পথ-ভ্রষ্ট হইয়া পড়িয়াছেন; কিন্তু তিনি তাহা হন নাই। যিনি চৈতন্যকে কীর্ত্তনের মধ্যে দেখিয়াছেন—“কত সুরধুনী বহে ও দুটি নয়নে”—ধারাহত পদ্মের ন্যায় অশ্রুপ্লাবিত শ্রীমুখের সৌন্দর্য্য দেখিয়াছেন, তিনি কাব্য-রস বিচ্যুত হইবেন কেন? কাজীর বাড়ীর কাছে চৈতন্যের মহাসংকীর্ত্তনের বর্ণনা কালেবৃন্দাবন দাস বলিয়াছেন, সেই কীর্ত্তনে শত শত মশালে ও দেউটির আলোকে নদীয়ার রাত্রি দিনের মত উজ্জ্বল হইয়াছিল। কিন্তু যাহার “ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী” অবনী বহিয়া যায়, সেই গোবিন্দের অশ্রুসিক্ত মুখখানি কীর্ত্তনে যে-যে জায়গায় জাগিয়া উঠিত, সেখানে সেই মুখ-শোভা দেখিবার জন্য শত শত দীপ জ্বলিয়া উঠিত ও জনতার ভীড় তথায় উদ্দাম হইয়া উঠিত। তাঁহার সেই ‘সরসিজমনুবিদ্ধং শৈবালেহপিবম্যং’ শুধু কুঞ্চিত কেশদামশোভিত মুখখানি, এবং কৃষ্ণবিরহ খিলক “পরিমুদিত ইব মৃণালী” তনু যে দেখিত, তাহার হৃদয়ে কি কবিত্বের উৎস কখনও শুকাইতে পারে!
‘‘চলাইতে চরণের সঙ্গে চলে মধুকর, মকরন্দ পান কি লোভে?
সৌরভে উনমত, ধরণী চুমুয়ে কত, যাঁহা যাঁহা পদ-চিহ্ন শোভে।’’
|
গৌরহরি বলিতেছেন—
‘‘ছুটিল পদ্মের গন্ধ বিমোহিত করি,
অজ্ঞান হইয়া নাম করে গৌরহরি।’’
|
এখানে রাধার অঙ্গে পদ্ম-গন্ধ, ভ্রমরগণ সেই ঘ্রাণে আকৃষ্ট হইয়া তাঁহার কাছে উড়িয়া বেড়াইতেছে, এদিকে রাধার আল্তা-রঞ্জিত চরণচিহ্ন মাটীর উপর পড়িতেছে, সেই রক্তিম চিহ্নকে পদ্ম ভ্রম করিয়া ভ্রমরগুলি মৃত্তিকা চুম্বন করিতেছে। অনন্তদাসের কবিত্ব সাম্প্রদায়িক জটিল রূপকের মধ্যে পড়িয়া হারাইয়া যায় নাই—তিনি লিখিয়াছেন— “রাজহংসী জিনি, গমন সুলাবণী”; এই পদে ‘সুলাবণী’ শব্দটির প্রতি লক্ষ্য করুণ। এই শব্দ ব্যাকরণশুদ্ধ নহে, এমন কি চলিত কথাও নহে, স্বর্ণকারের মত সংস্কৃতের সোণা গড়িয়া পিটিয়া তিনি এই শব্দটি রচনা করিয়াছেন।
“কিবা কনকলতা জিনি, জিনি সৌদামিনী, বিধির অবধি রূপ সাজে।”
এখানে “বিধির অবধি রূপ”—অর্থাৎ বিধাতার যতটা শক্তি তাহা তিনি রাধার রূপ-সৃষ্টিতে প্রয়োগ করিয়াছেন, সুতরাং পদগুলি কবিত্বহীন, এ কথা কেহ বলিতে পারিবেন না।
এই অভিসার লইয়া বৈষ্ণব কবিরা নূতন নূতন কত শ্রেণীই না বিভাগ করিয়াছেন! চৈতন্য বর্ষা-বাদলে, অমানিশার ঘোর অন্ধকারে, রৌদ্রোজ্জ্বল দিবা-দ্বিপ্রহরে, জ্যোৎস্নাময়ী নিশীথিনীতে হরিনাম কীর্ত্তন করিয়া বেড়াইয়াছেন, তাঁহার এই অভিসার নানা সময়ে নানা স্থানে নব নব রূপের সৃষ্টি করিয়াছে। কৃষ্ণের রূপের সন্ধান যে পাইয়াছে, তাহার মুখে চোখে সেই রূপের প্রতিবিম্ব পড়িয়াছে, তাহারও রূপের অন্ত নাই। সেই রূপের যথাযথ চিত্র আঁকিতে যাইয়া কবিরা কি অলঙ্কারশাস্ত্রের খাতিরে বাদসাদ দিতে সম্মত হইতে পারেন? এইজন্য এই অভিসারের চিত্র বিচিত্র, শাস্ত্র-বিমুক্ত এবং অভিনব। কবিরা অলঙ্কারশাস্ত্রের নূতন অধ্যায় সৃষ্টি করিয়াছেন। তাঁহাদের কাব্যে যেরূপ বর্ষা-রাত্রির অভিসার আছে, তেমনই জ্যোৎস্নার অভিসার আছে। অমানিশির অভিসার ও দিবাভিসার—উভয়ই তাঁহারা বর্ণনা করিয়াছেন এবং বাধ্য হইয়া বৈষ্ণব আলঙ্কারিকেরা তাঁহাদের শাস্ত্রে অভিসারের এই সকল নব পর্য্যায় মানিয়া লইয়াছেন।
অভিসার-বর্ণনাকারী কবিদের মধ্যে গোবিন্দদাস শ্রেষ্ঠ; তাঁহার পদাবলীতে কবিত্ব, পদমাধুর্য্য এবং অধ্যাত্মসম্পদ্ এত বেশী যে, তাহা যেরূপ কাব্য রসাস্বাদির পক্ষে উপাদেয়, সাধকের পক্ষেও তাহা কমউপভোগ্য নহে। যে দুঃখসহ বিপদের পথ অতিক্রম করিয়া রাধা কৃষ্ণের কাছে উপনীত হইয়াছেন, তাহার বর্ণনা আমাদিগকে একটা কাল্পনিক জগতে লইয়া যায়; কিন্তু গূঢ় অন্তর্দৃষ্টিতে দেখিলে, সাধন-ক্ষেত্রে উহা ভক্তের সিদ্ধির ইঙ্গিত-স্বরূপ প্রতীয়মান হইবে।
‘‘মন্দির ত্যজি যব পদচারি আইনু, নিশি দেখি কম্পিত অঙ্গ,
তিমির দুরন্ত, পথ হেরই না পারই, পদযুগ বেড়ল ভুজঙ্গ।
একে কুলকামিনী, তাহে কুহু যামিনী, ঘোর গহন অতি দূর,
আর তাহে জলধর বরখিয়ে ঝর ঝর, হাম যাওব কোন পুর।
একে পদ-যুগ্ম পঙ্কে বিভূষিত, কন্টকে জর জর ভেল।
তুয়া দরশন-আশে কিছু নাহি জানিনু চিরদুঃখ অব দূরে গেল।
তোহারি মুরলী যব শ্রবণে পশিল, ছোড়ল গৃহসুখ আশ।
পথহু দুঃখ তৃণ করি মানিনু, কহতহি গোবিন্দদাস।’’
|
‘‘কুহু যামিনী” অর্থে অমানিশা। এই ঘনান্ধকার বাদলে অমানিশায় ঘোর গহন পথে রাধা কোন্ পুরে যাইতেছেন? কৃষ্ণ তাঁহাকে দেখা দেওয়ার আশ্বাস দিয়া কোন্ পথে লইয়া যাইতেছেন, সে পথ বৃন্দারণ্যের শ্যামকুঞ্জে কিংবা যোগী-ঋষির অধ্যূষিত কোন নিবিড় গিরিগুহায়, তাহা রাধা জানেন না। শুধু মুরলীর ধ্বনি শুনিয়া, পথ-বিপথ গণ্য না করিয়া তিনি ছুটিয়া আসিয়াছেন। যেদিন তিনি তাঁহার সেই ডাক শুনিয়াছেন, সেই দিনই তাঁহার গৃহ-লোপের চিন্তা লুপ্ত হইয়াছে এবং সাধন-পথের এই সমস্ত ভীষণ কষ্ট তৃণবৎ উপেক্ষা করিয়াছেন। এই সুললিত ও সুমিষ্ট শব্দে গ্রথিত পদটি কি অধ্যাত্মপথের স্পষ্ট ইঙ্গিত নহে?
কৃষ্ণদর্শনের এই যে দুর্দ্দমনীয় আবেগ ও গতিশীলতা, তাহা বিষ্ণুপদচ্যূতা সুরধূনীর স্রোতেরই মত। ইহা সাধারণ নায়ক-নায়িকা সন্ধন্ধে প্রযুজ্য নহে। এইজন্যই ইহা এমন নিছক কবি-কল্পনা ও গূঢ়-রহস্য-জড়িত ভাষায় ব্যক্ত হইয়াছে, যে—জড়বাদীরা ইহার মর্ম্ম তেমন বুঝিবেন না, যেরূপ ভাবপ্রবণ প্রেমিক বুঝিবেন।
‘‘মন্দির বাহিরে কঠিন কপাট,
চলইতে শঙ্কিত পঙ্কিল বাট,
তাহে অতি দূরতর বাদল-দোল,
বাকি কি বারই নীল নিচোল।
সুন্দরি কৈছে করবি অভিসার।
হরি রহু মানস সুরধনীপার।
ঘন ঘন ঝন্ ঝন্ বজর-নিপাত,
শুনইতে শ্রবণে, মরমে মরি জাত।
দশদিশ দামিনী দহই বিথার,
শুনইতে উচকই লোচন-তার।
ইথে যদি সুন্দরি তেজবি গেহ,
প্রেমক লাগি উপেথবি দেহ।
গোবিন্দ দাস কহে ইথে বিচার,
ছুটল বাণ কিয়ে যতনে নিঘার।’’
|
সংসার টিটকারী দিতেছে—শত হস্ত বাড়াইয়া রাধাকে নিরস্ত করিতে চাহিতেছে। তুমি হরির সন্ধানে কোথায় যাইবে—ইহা দুরাশা; তিনি মানস-গঙ্গার ও-পারে আছেন (মনোনবদ্বারনিষিদ্ধ-বৃত্তি আত্মসমাহিত যোগী শুধু যাঁহাকে পান)—তাঁহাকে পাইব বলিলেই কি পাওয়া হয়? এই ঘন ঘন বজ্রপাত, বিদ্যুতের চকিত আলোকে চক্ষের তারা ঝলসিয়া যাইতেছে। তুমি কি প্রেমের জন্য দেহকে এমন করিয়া উপেক্ষা করিবে?
গোবিন্দ দাস বলিতেছেন, এখন কি আর এ বিষয়ে বিচারের অবকাশ আছে? বাণ হস্তচ্যূত হইয়াছে, এখন আর শত চেষ্টায়ও তাহার গতি ফিরান যাইবে না।
এই গীতে আবার সেই স্পষ্ট ইঙ্গিত। গোবিন্দ দাসের চক্ষের সম্মুখেই কত কুবের-তুল্য ধনাঢ্য ব্যক্তি, কত রাজপুত্র কৃষ্ণপ্রেমে সর্ব্বস্ব ত্যাগ করিয়া, দুর্গম পথের কষ্ট শিরোধার্য্য করিয়া, ঘর ছাড়িয়া চলিয়া গিয়াছেলেন, সে ছিল বাঙালার ত্যাগ-ধর্ম্মের সুবর্ণ-যুগ। সুতরাং গোবিন্দ দাসের কবিতা কল্পনালোকের কথা নহে, সেই অধ্যাত্ম-কল্প-লোকেরই কথা। কৃষ্ণ যমুনাতীরে আছেন, কিম্বা রাধাকুণ্ডের তীরে আছেন, সে সকল মামুলী কথা তিনি বলেন নাই। তিনি ধ্যানলোকে বসিয়া, সমস্ত লৌকিক সংস্কার ও কবিপ্রসিদ্ধির এলাকা ছাড়িয়া দিয়া বলিয়াছেন—“হরি রহু মানস-সুরধুনী-পার” এবং রাধাকে বলিতেছেন, “তুমি কেন অভিসার করিয়া মরিবে?—তাঁহাকে পাইবে না (“সুন্দরী কাহে করবি অভিসার”)!” কেবলই অধ্যাত্ম-তথ্যের ইঙ্গিত দিয়া তিনি কাব্যের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেন নাই, কবিদের পথেই চলিয়াছেন—
‘‘তাহে অতি দূরতর বাদল-দোল,
বারি কি বারই নীল নিচোল।’’
|
বর্ষার অবিরত বৃষ্টিপাতে দূর-প্রসারিত অরণ্যের রেখা পর্য্যন্ত দোল খাইতেছে। তুমি কি এই ক্ষীণ নীল শাড়ীর আঁচল দিয়া সেই বাদলের বেগ নিবারণ করিতে পারিবে?
ইহার পরে গোবিন্দ দাসের অভিসারের আর একটি পদ উদ্ধৃত করিব, তাহা একেবারেই মর্ত্ত্যেলোকের কথা নহে। তন্ত্রোক্ত শব-সাধনা, যেখানে সাধক শবের উপর বসিয়া তপস্যা করেন—পঞ্চাগ্নিকের দুশ্চর প্রচেষ্টা, যেখানে তিনি গ্রীষ্মকালে চারিদিকে প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের দুঃসহ তাপ সহ্য করিয়া পঞ্চম অগ্নি-স্বরূপ মধ্যাহ্নের প্রখর মার্ত্তণ্ডের দিকে বন্ধদৃষ্টি হইয়া থাকেন—শত কল্পারূঢ় যোগীর নিশ্চল আসন, যেখানে তিনি অনাহারে অনিদ্রায় তপশ্চরণ করেন—এই পদোক্ত প্রেমিকের সাধনা তাদেরই এক পাঙ্তেয়। প্রভেদ এই যে, তপস্বীরা বহুকষ্টে সংযমী হইয়া তপস্যা করেন, কিন্তু প্রেমিকের তত্তুল্য বা ততোধিক কষ্ট অনুরাগের সহিত বলিয়া তৃণবৎ উপেক্ষিত হয়। কবি বলিতেছেন;—
‘‘কন্টক গাড়ি’, কমল সম পদতল মঞ্জীর চীয়হি ঝাঁপি’
গাগরি-বারি ঢারি, করি পিছল পথ, চলিছি অঙ্গুলী চাপি।
মাধব তুয়া অভিসারক লাগি’।
দূরতর পন্থা গমন ধনী সাধয়ে,
মন্দিরে যামিনী জাগি;
কর-যুগে নয়ন মুদি’ চলু ভামিনী,
তিমির পয়ানক আশে।
মণি কঙ্কণ পণ ফণি-মুখ-বন্ধন,
শিখই ভুজগুরুপাশ।
গুরুজন-বচন বধির সম মানই,
আন শুনই কহ আন।
পরিজন-বচনে মুগধি সম হাসই,
গোবিন্দ দাস পরমান।’’
|
ইহা সামান্য নায়িকার অভিসার নহে—যে, একটু ইশারা পাইলেই ইডেন-গার্ডেন বা গোল-দীঘির বেঞ্চে বসিয়া গল্প করিবার জন্য প্রতীক্ষা করিবে কিম্বা লেক-রোডে একত্র ঘুরিয়া বেড়াইবার লোভে ছুটিয়া যাইবে। এই অভিসারের জন্য তৈরী হইতে হইলে, যুগ যুগের তপশ্চরণের দরকার। আঙ্গিনায় কাঁটা পুতিয়া, কলসী কলসী জল ঢালিয়া কন্টকাকীর্ণ পিচ্ছল পথে যাতায়াত শিখিতে হইবে, পায়ের নূপুরের কলস্বন চীর-খণ্ডে বন্ধ করিয়া সারা রাত্রি আঙ্গুল চাপিয়া হাঁটা অভ্যাস করিতে হইবে এবং আঁধার পথে যাওয়া শিখিবার জন্য চক্ষু বুজিয়া পথে চলিতে হইবে—কারণ “আমার যেতে যে হবে গো—রাই ব’লে বাজিলে বাঁশী”, তখন তো আমি এক মুহূর্ত্তও ঘরে অপেক্ষা করিতে পারিব না। রাধিকা সর্পসঙ্কুল পথে চলা-ফেরা শিখিবার জন্য ভূজগ গুরুর (ওঝার) নিকট নিজ মণিময় কঙ্কণ-মূল্য (পণ) দিয়া সাপের মুখ কিরূপে বন্ধ করিতে হয়, তাহাই শিখিতেছেন; গুরু-জন যখন ভর্ৎসনা করেন, তখন তিনি বধির হইয়া থাকেন—যেন কিছুই শুনিতে পান না। বাহিরের লোক উপদেশ দিতে আসিলে, যেন তিনি তাঁহাদের কথা বুঝেন নাই—পাগলীর মত (মুগ্ধী) অকারণে হাসেন। এই সকলই সংসার হইতে বাহির হইবার যোগ্যতার্জ্জনের শিক্ষা এবং ইহা প্রেমের পথে তাঁহাকে পাইবার তপস্যা। কবি নিজেই ইহাকে সাধনা বলিয়াছেন (“দূর তর পন্থা গমন ধনী সাধয়ে”)।
Complete Gita Govinda/Ashtapadi Lyrics with Meaning ...
srikrishnaradha.com/complete-gita-govinda-with-meaning/
The theme of it is the love of Radha and Krishna, symbolizing the longing and ... Love naturally takes expression in song, so Sri Gita-govinda has naturally ...
By Sri Narayana Maharaj
The divine pastimes (leelas) of Sri Radha-Krishna reside together like a collection of paintings in the mansion of Sri Jayadeva’s heart. An artist first has an internal vision. After transferring that vision to his canvas, it becomes a painting. Similarly, this picture of loving pastimes has been painted by the brush of Sri Jayadeva. The marvelous mansion of his heart is decorated with paintings of Sri Radha-Madhava’s intimate encounters, and its fabulous treasury is his fascinating poetry. The poet has renounced all sense of responsibility for the authorship of this narration because his speech and mind are absorbed in Sri Krishna.
What kind of poem is this? In response the poet says, “This poem is predominated by shrugara-rasa and it is exceptionally sweet. Its meaning is readily comprehensible. Every verse is immensely endearing, Radha-Krishna’s attribute of beauty enhanced by love. As a lover is dear to her beloved, this charming composition is extremely dear to the pure devotees. The theme of it is the love of Radha and Krishna, symbolizing the longing and striving of the individual, for communion with God, culminating in their blissful union. Love naturally takes expression in song, so Sri Gita-govinda has naturally assumed the format of a musical. It should be sung in a melodious voice.”
.
What kind of poem is this? In response the poet says, “This poem is predominated by shrugara-rasa and it is exceptionally sweet. Its meaning is readily comprehensible. Every verse is immensely endearing, Radha-Krishna’s attribute of beauty enhanced by love. As a lover is dear to her beloved, this charming composition is extremely dear to the pure devotees. The theme of it is the love of Radha and Krishna, symbolizing the longing and striving of the individual, for communion with God, culminating in their blissful union. Love naturally takes expression in song, so Sri Gita-govinda has naturally assumed the format of a musical. It should be sung in a melodious voice.”
.
No comments:
Post a Comment