সিঙ্গুরের বাইরে বেদখল চাষিরা কবে জমি ফেরত পাবেন বা ক্ষেত মজুরদের কি হবে বা সত্যিই কি লাঙগল যার জমি তাঁরই?
পলাশ বিশ্বাস
সিঙ্গুর জয়ী।সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অবৈধ।লাঙল যার,জমি তাঁর।
ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের রায় বেনজির।
জনগণের রায়কে একেবারে খারিজ করে দিয়ে উন্নয়নের নামে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অবৈধ যদি হয়,এই নিরিখে,এই নজিরে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ে জোর জবরদস্তী সারা ভারতে উন্নয়নের নামে যে ভাবে জমি অধিগ্রহণকরা হয়েছে এবং সিঙ্গুরের আগেও স্বাধীনতার পর বাংলায় যত জমি চাষীদের আপত্তি সত্বেও অধিগ্রহণ করা হয়েছে,সর্বক্ষেত্রে সেই অধিগ্রহণও রদ করতে হয়।
বিশেষ করে যে ভাবে স্বাধীনতার পর থেকেই আদিবাসী ও দলিতদের জল জমি জঙ্গল ও জীবন জীবিকা থেকে উত্কাত করার একচেটিয়া আক্রমণের গণসংহার অভিযান এই রাযের আগে ও পরেও চলছে ও চলবে।
মনে রাখা দরকার যে সুপ্রীম কো্র্টের রায়ের পর পর মমতা ব্যানার্জির জয়ের আনন্দে চোখের জল মোছার আগে বা বিজয় উত্সব পালনের আগেই বাজার ও শিল্পমহলকে আশ্বস্ত করতে হয়ছে যে বাংলায় এই রায়ে লগ্নির পরিবেশ বিঘ্নিত হবে না।
চাষীদের এই ঐতিহাসিক রায় সিঙ্গুরে সীমাবদ্ধ থেকে যাওযারই সম্ভাবনা যেমন বেশি,তেমনই ক্ষেত মজুরদের অধিকারের লড়াইটাও বাকী থেকে যাওয়ার আশন্কা অনেক বেশি।বাকী বাংলা ও ভারতবর্ষের চাষীদের দজমি ফেরতের লড়াইও ঠিক তমন ভাবেই কছিন ও দীর্ঘতর।
জল জমি জঙগলের অধিকারের জন্য এখনো দীর্ঘ আইনী লড়াই বাকী আছে। যেমন সিঙ্গুরের ক্ষেত্রেও জমি মালিকেরা হয়ত জমি ফেরত পাবেন,দশ বছর অনাবাদ জমির ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাঁদের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা তাঁদের হাতেই থাকছে বা যারা চেক ভাঙাননি বা যারা আদৌ ক্ষতিপূরণ নেননি,তাঁদেরও ক্ষতিপূরণ মিলবে।
এই মামলায় জমি মালিকেরা জমি মালিকদের শুনানি হয়েছে এবং রায় তাঁদের পক্ষেই আপাতত। আপাতত যেহেতু সুপ্রিম কোর্টেই টাটাদের শুনানি এখনো চলছে এবং সুপ্রীম কোর্টের উচ্চতর বেন্চে এই রায়ের আপিলের শুনানির পর শেষ রায় কি হবে,এখনই বলা মুশকিল।সে যা হোক,রায় উলটে গেলেও শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে সিঙ্গুরে মা মাটি মানুষের জয় এসেছে নিশ্চিতভাবেই এবং প্রস্তুতি যদি মুখ্যমন্ত্রী করে থাকেন ত সুপ্রীম কোর্টের রায় মোতাবেক শেষ রায় আসার আগেই বেদখল চাষিরা তাঁদের জমি ফেরত পাবেন।
জমির চরিত্র যেহেতু বদলে গেছে,যেহেতু তিন ফসলী ঔ জমি এখন কংক্রীটের খন্ডহর,তাই জমি ফেরত পেলেও ঔ জমিতে চাস আবাদ নূতনকরে হবেকিনা বা ঔ জমি নিয়ে জমি মালিকরা শেষ পর্যন্ত কি করবেন বা কি করতে পারেন,এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখনই মিলবে না।এককথায় সিঙ্গুর আজ জয়ী।
কিন্তু যারা প্রথম থেকে সিঙ্গুরে জমি ফেরত পাওয়ার লড়াইয়ে আন্দোলনের সিংহ ভাগে ছিলেন সেই লাঙল যাদের,যারা প্রকৃতপক্ষে জমি চাষ করেন ,সেইসব ক্ষেত মজুররা কি পেলেন,এই রায়ে সে কথা জানা গেল না।তাঁদের কোনো শুনানি হয়নি।তাঁরা জমি ফেরত ত পাচ্ছেন না,ক্ষতিপূরণের আদেশ ও তাঁদের জন্য হয়নি।
জমি আন্দোলনের নেত্রী ও বর্তমান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাঁদের জন্য যদি পৃথক কোনো ব্যবস্থা করার কথা ভেবে থাকেন এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন ত সর্বার্থে এই রায়ে লাঙল যার ,জমি তার তত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
যথার্থই এই রায়ের রাজনৈতিক তাত্পর্য্য আইনি গুরুত্বের চাইতে অনেক গুণ বেশি।সুপ্রিম কোর্টের রায় শেষ পর্যন্ত সব মামলার শুনানি,আপীলের শুনানির পর কি দাঁড়ায় এবং কত তাড়াতাড়ি চাষিরা তাঁদের জমি ফেরত পাবেন বা ক্ষেত মজুরদের জন্য মমতা ব্যানার্জি কিছু করতে পারেন কি পারেন না,তার চাইতে বড় কথা হল উন্নয়নের পুঁজিবাদী পন্থা অবলম্বন করে অন্ধ নগরায়ণ ও শিল্পায়ণে গুরুত্ব দিয়ে,বাম নেতৃত্ব ও সরকার যে ঐতিহাসিক ভূল করেছিল,ভূমি সংস্কারের ও কৃষি ভিত্তিক উন্নযনের পথ ত্যাগ করে তাঁরাও যে মুক্ত বাজারের নবউদারবাদী অর্থনীতিতে রাজনৈতিক মতাদর্শ এবং সারা ভারতে বামপন্থার প্রাসঙ্গিকতা বিসর্জন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সেই তত্ব নির্ণায়ক ভাবে এই রায়ে প্রমাণিত হল।
উন্নযণের স্বার্থে নয়,জনগণের স্বার্থেও নয়,বামপন্তী নেতৃত্ব ও বাম সরকার সরাসরি হার্মাদ বাহিনী হয়ে জোর জবরদস্তী চাষিদের তাঁদের জমি থেকে বেদখল করেছেন ব্যাক্তি ও করপোরেট পুঁজির স্বার্থে।
গণহত্যার রক্তে রাঙানো ঔ লাল ঝান্ডার পতপত করে ওড়া আরো মুশকিল।
সেই অর্থে এই রায়ের ফলে ভারতে বামপন্থীদের রাজনৈতিক অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়ল এবং জল জমি জহ্গলের লড়াইয়ে নেতৃত্ব করার অদিকার তাঁরা যেমন হারাল,মেহনতী মানুষের হাত থেকে লাল ঝান্ডা কেড়ে নিয়ে তাঁদের লড়াই থেকে চিকরকালের মত বামপন্থীরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল এবং বাংলায় নিকট ভবিষ্যতে তাঁদের ফিরে আসার যেমন সম্ভাবনা রইল না,তেমনই মমতা ব্যানার্জির প্রতিপক্ষ বলে আর কিছু থাকল না।
সারা ভারতে জমি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে মমতা ব্যানার্জি ইচ্ছুক কিনাএটা এখন বড় প্রশ্ন।সুপ্রিম কোর্টের এি রায়ে তিনি নিঃসন্দেহ ভারতবর্ষে জমি আন্দোলনের সব থেকে বড় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলেন কিন্তি শধু সিঙ্গুরের চাষীদের জমি ফেরতের লড়াইযের বাইরে তিনি বাংলায় অন্যত্র বা সারা দেশে বেআইনী জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে জনগণের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না সেই প্রশ্ন বামপন্থীরা আবার চাষিদের,মেহমনতী মানুষদের,সর্বহারাদের নেতৃত্ব দিতে পারবেন কিনা,একই রকম ঘোরতর জটিল প্রশ্ন,যার উত্তর আপাতত নেই।
No comments:
Post a Comment