ক. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
“ Warcriminal ”- এর প্রতিশব্দ collaborator নয়। “ Warcriminal ” বা যুদ্ধাপরাধীদের স্বাধীনতার পর স্নেহ করে “collaborator” বলা হয়েছিল। আশুতোষ দেব প্রণীত অভিধানে “collaborator”- এর অর্থ দেওয়া আছে- “বিশেষ করিয়া সাহিত্য বা বিজ্ঞানের অনুশীলনে সহকারী ব্যক্তি”। শাহরিয়ার কবির তো বটেই, কবীর চৌধুরীর মত অতি-উচ্চ-লার্ণেড জাতীয় অধ্যাপকরা নিশ্চয় জানেন যে, collaborator- শব্দটির শুধু মন্দ-অর্থে ব্যবহার নেই। যুদ্ধাপরাধীরা collaborator পদবী পেয়ে নিশ্চয় অতিশয় সম্মানীত এবং আনন্দিত হয়েছিল।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি। কিন্তু দাবিটি জনগণের মন থেকে মুছে যায় নি। দাবিটি তুষের আগুনের মতো সমস্ত বাংলাদেশের মাটির নিচে জলন্ত আছে। আজ হোক, কাল হোক- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ দেশে হবেই। এই বিচার হবার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সম্পর্কে দু’টি প্রশ্নের ঠিক জবাব জানা প্রয়োজন।
প্রথম প্রশ্ন: কারা স্বাধীনতা-বিরোধী?
আমাদের জবাব: ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে পাকিস্তানের অখণ্ডতার কাজে যুক্তরাই স্বাধীনতা বিরোধী।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: এই স্বাধীনতা বিরোধীদের কোথায় পাওয়া যাবে?
আমাদের জবাব: প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খানের মন্ত্রিপরিষদ, জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য হিসেবে ৯ মাস প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খানের নানা নির্দেশ পালন করে যারা বেতন-ভাতা গ্রহণ করেছে তারাই স্বাধীনতা বিরোধী। অতএব এই তিন পরিষদে স্বাধীনতা বিরোধী নীতিনির্ধারকদের পাওয়া যাবে।
৭১-এর ঘাতক দালালরা কে কোথায়? পুস্তকটি নিশ্চিতভাবে মূল্যবান এবং দরকারি। কিন্তু এই পুস্তকে শুধু মাত্র চিকন আলীদের নাম আছে। আমাদের দরকার প্রেসিডেণ্ট ইয়াহিয়া খানের মন্ত্রীপরিষদের সদস্যদের, জাতীয় পরিষদ সদস্যদের এবং প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের সম্পূর্ণ তালিকা। এই তালিকাই হল স্বাধীনতা বিরোধীদের মোটা এবং গোড়া আলীদের তালিকা। মোটা ও গোড়া আলীদের ভয় দেখিয়ে রাজনৈতিক সমর্থন পাবার জন্য চিকন আলীদের দু’এক ঘা দেয়া হবে বিচারকামী জনগণকে প্রতারণা করা। জজ সাহেব ফাঁসী দেন, যদিও তা কার্যকর করে ফাঁসুড়ে। অন্যায় অবিচারের জন্য শেখ মুজিবের “জজ সাহেব”দেরকে প্রদত্ত সাধারণ ক্ষমা নতমস্তকে মেনে, ফাঁসুড়ের বিচার দাবি অতি নোংরা প্রতারণা। এই প্রতারণা রোধের জন্য উপরে বর্ণিত ৩টি পরিষদের সদস্য হিসেবে ইয়াহিয়া খানের পেয়ারে জজ সাহেবদের নামের পূর্ণ তালিকা প্রকাশ করা প্রয়োজন এবং ইয়াহিয়া খানের গভর্ণর ড: আব্দুল মালেকসহ সকল মন্ত্রী-জাতীয় পরিষদ-প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যকে বিচারের আওতায় আনা দরকার।
যুদ্ধাপরাধীদের চিহ্নিত করার সময় অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে। ইয়াহিয়া খানের অধীনে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের বিচার যেমন করতে হবে, তেমন বিচার করতে হবে সেই সব ব্যক্তির যাঁরা ইয়াহিয়া খানের রাষ্ট্রপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী হবার চেষ্টা ও দাবি করেছিলেন। ইয়াহিয়া খানের গভর্ণর-মন্ত্রীদের পরিচয় প্রকাশ্যে প্রচারিত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খানের অধীনে প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী হবার চেষ্টারত ব্যক্তিদের পরিচয় আজও আমরা সবাই জানি না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না হবার জন্য পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রী হবার দাবিদাররা অনেক বেশি দায়ি। কারণ কেউ জানুক, না-জানুক এই প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীর দাবিদাররা জানেন যে, ২৬শে মার্চের পর ইয়াহিয়া খানের রাষ্ট্রপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী হবার চেষ্টাও স্বাধীনতার বিরোধিতা এবং যুদ্ধাপরাধ। অতএব সুষ্ঠু এবং যথাযথ তদন্ত এবং বিচার শুরু হলে আগে হোক পরে হোক তাদের নাম অনিবার্যভাবে উদ্ঘাটিত হবে। ফলে, আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে এঁরা বিচারের পথে নানা বাধা তৈরি করে আজও বিচার করা ঠেকিয়ে রেখেছে। কিন্তু এতকাল এঁরা বিচার না হবার ক্ষেত্রে সফল হয়ে থাকলেও, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ এবং বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়ন একদিন হবেই, হবে। ৭/৩/০৮ https://www.facebook.com/ali.ashraf.752/notes |
|
No comments:
Post a Comment