Saturday, March 26, 2016

অনুমতি ছাড়াই দেশে কাজ করছেন লক্ষাধিক বিদেশি

অনুমতি ছাড়াই দেশে কাজ করছেন লক্ষাধিক বিদেশি

সাইদুল ইসলাম

 দুই মাসের ভিসা পাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন অনেকেই

 অপকর্মে জড়িয়ে পড়া, কর ফাঁকির ঘটনা বাড়ছে

 অবৈধদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক সংগঠনের সহায়তা চেয়েছে পুলিশ

দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কতজন বিদেশি কাজ করেন তার সুনির্দিষ্ট হিসাব নেই। এক্ষেত্রে বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমোদনের প্রয়োজন থাকলেও অনেকেই এ নিয়ম মানছেন না। শুধু বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানই নয়, শতভাগ বিদেশি এবং যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানেও নিয়ম-বহির্ভূতভাবে বিদেশিরা এসে কাজ করছেন। সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে চার লাখেরও বেশি বিদেশি কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে লক্ষাধিক বিদেশির কাজের অনুমতি নেই।

এছাড়া বিদেশিদের অনেকে বিনা ওয়ার্ক পারমিটে বাংলাদেশে এসে নানা ধরনের বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ছে বলে পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে পুলিশের বিশেষ শাখা অবৈধভাবে বাংলাদেশে থাকা বিদেশিদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হয়েছে। দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কাছে দেয়া চিঠিতেও এ ব্যাপারে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে অবৈধভাবে থাকা বিদেশিদের তালিকা তৈরির উদ্যোগ এবারই প্রথম নয়। এ ব্যাপারে বিনিয়োগ বোর্ড ২০১১ সালে সংস্থার নির্বাহী চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটিকে বৈধ এবং অবৈধ বিদেশিদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কমিটি ওই কাজে ব্যর্থ হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, বাংলাদেশের যেসব খাতে বিদেশিরা কাজ করে সেগুলো হচ্ছে তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, বিভিন্ন সেবাখাত যেমন-হোটেল, রেস্টুরেন্ট, আইটি, এয়ারলাইন্স, কার্গো সার্ভিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল প্রভৃতি। বাংলাদেশে দেশীয় এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত শ্রীলংকা, ভারত, পাকিস্তান, চীন, কোরিয়া, প্যালেস্টাইন, তাইওয়ান এবং আফ্রিকার দেশগুলোর নাগরিকরা কাজ করেন। তবে পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলংকার নাগরিকরা গার্মেন্টস এবং সেবাখাত নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে।

বিনিয়োগ বোর্ডসূত্র জানায়, অনেকে ভিজিট ভিসায় বাংলাদেশে এসে কাজ করলেও তাদেরকে ধরার কোন উদ্যোগ নেই। বিভিন্ন সময়ে নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে কেউ গ্রেফতার হলে তখন দেখা যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ওয়ার্ক পারমিট নেই।

পুলিশের বিশেষ শাখার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর কাছে চিঠি দিয়ে অবৈধভাবে বাস করা বিদেশি কর্মীদের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীগুলোর এসোসিয়েশন, টেক্সটাইল মিল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ, শিপিং ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডস কোম্পানি এবং ইপিজেডগুলোর কাছ থেকে বিদেশি কর্মীদের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে এসে চাকরি করতে হলে বিনিয়োগ বোর্ডের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক বিদেশি বাংলাদেশে ব্যবসায়িক বা টুরিস্ট ভিসায় এসে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে তারা নিজস্ব দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মাল্টিপল ভিসা নিয়ে থাকেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন দেশ মাল্টিপল ভিসা দেয়ার সময় লিখে দেয় দুই সপ্তাহের বেশি থাকা যাবে না। কিন্তু বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসগুলো মাল্টিপল ভিসা দেয়ার সময় দুই মাস অবস্থান করার অনুমতি দেয়। এতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশে এসে চাকরি করেন। দুইমাস পর ছুটিতে নিজের দেশে গিয়ে বেড়িয়ে আসেন।

সূত্র জানায়, বিদেশিরা শুধু বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছে তা নয়, প্রতিবছর তারা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছেন। যেসব ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করেন তারা এক বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩৭১ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে গেছেন। ভারত যেসব দেশ থেকে রেমিট্যান্স পায় বাংলাদেশ তার মধ্যে পঞ্চম। বিনিয়োগ বোর্ডের হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ হাজার ভারতীয় নাগরিক বৈধভাবে কাজ করছেন।

বিদেশি নাগরিকদের অনেকে বিপুল অংকের করও ফাঁকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক বিদেশি এখানে বৈধভাবে কাজ করলেও কর ফাঁকি দেয়ার জন্য তারা বেতন কম দেখান। বাংলাদেশে শুধু নিজের থাকা-খাওয়ার টাকাটা তারা নেন। বাকি টাকা নিজ দেশের সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তার কাছ থেকে নেন। এভাবে বিদেশিরা বিপুল অংকের কর ফাঁকি দিচ্ছেন।

http://archive.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMjFfMTRfMV8xXzFfMTE3Mzg2

No comments:

Post a Comment