Srirupa Manna
কিছুদিন আগে SRFTI, তারপর ISI গতকাল JU.... এই মুহূর্তে চারপাশের বিভিন্ন ঘটনা দেখে সবচেয়ে বেশী যা ভাবচ্ছে তা হল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যৌন হেনস্থা রুখতে ও লিঙ্গ সাম্য রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে বারবার যৌন নিগ্রহের ঘটনার খবর আসলেও, প্রতিষ্ঠানগুলিতে আজও পর্যন্ত নেই CASH এর সুব্যবস্থা, নেই অভিযোগ জানানোর জন্য ও যৌন হেনস্থার তদন্তের জন্য কোন ন্যূনতম পরিকাঠামো। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে CASH থাকলেও, তার উপস্থিতি এতই নগন্য যে টেরও পাওয়া যায় না। যদিও যৌন হেনস্থার ঘটনা মোটেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রথম নয়, অনেক ছাত্রীরাই এর আগে কখনও শিক্ষকের দ্বারা কখনও হোস্টেল ছাত্রদের দ্বারা বা সহপাঠীর দ্বারা নানান সময়ে নানা মাত্রার হেনস্থার শিকার হয়েছে বলে শোনা যায়।
বাস্তবিকই, যাদবপুর বা SRFTI এর ঘটনা এইরকম অনেক ঘটনার মধ্যে খবরের কাগজে প্রকাশ হওয়া দু-একটা মাত্র। সেক্ষেত্রে, বাস্তবের অপ্রকাশিত, ধামাচাপা পড়া, মিডিয়ার টিআরপি না পাওয়া লিস্ট টা যে কত লম্বা হতে পারে তা একমাত্র আমাদের প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতাই জানান দেয়। আর ঘটবে নাই বা কেন? সমাজ জুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য শিক্ষার এতো ব্যবস্থা (পরিবারে, খবরের কাগজে, এডভারটাইসমেন্টে, নেতার বাচনীতে, মদের বোতলে আর ধর্ষণে!) অথচ লিঙ্গ-সমতার কথা বলার পরিসর মেলা দুষ্কর!
কে শেখাবে সমতার কথা? পাঠ্যসূচিতে তো নেই লিঙ্গ-সমতা শিক্ষার ন্যূনতমটুকুও। আর আমাদের মহান শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে, ক্যাম্পাসে যৌনহেনস্থার ঘটনা ঘটলেই গেল গেল (সম্মানটুকু!) বলে ধামাচাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠে কর্তৃপক্ষের সব মহল!
অথচ ১৯৯৯ সালেই আমাদের দেশের সুপ্রিম কোর্ট UGC-র চেয়ারপার্সন সহ প্রতিটি উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের উপাচার্য কে ক্যাম্পাসে যৌন-হেনস্থা প্রতিরোধক সেল তৈরী করার নির্দেশ পাঠিয়েছিল। সেই নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিটি উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে Internal complaint committee (ICC) থাকা বাঞ্ছনীয়। অথচ UGCর প্রকাশিত রিপোর্ট ‘SAKSHAM’ বলছে ২০১২য় করা সমীক্ষায় বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জানাচ্ছে তাদের কাছে কোন অভিযোগই জমা পড়েনা। অভিযোগ জমা না পড়ার নেপথ্য কাহিনী তো আমরা আজকে দেখছি বিশ্বভারতীর SRFTI থেকে যাদবপুরের ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়ার বাস্তবতায়।
বিশাখা গাইডলাইন বা ২০১৩র কর্মস্থলে যৌন হেনস্থা প্রতিরোধক আইন কিন্তু ‘কর্মস্থল’ হিসেবে বিশেষ জায়গা দিচ্ছে ইউনিভারসিটি বা উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠান কে। কেন এই বিশেষ জায়গা? কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে একটা প্রাথমিক জায়গা, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা শিখতে আসে তাদের ভবিষ্যত জীবনে চলার পন্থা। তাই ক্যাম্পাসে তাদের জন্য বিশেষ করে আমাদের সমাজের ছাত্রীদের জন্য নিরাপদ আর সম্মানজনক একটা পরিবেশ পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। যাতে কিনা তারা ভবিষ্যত জীবনে আত্মবিশ্বাসের সাথে যেকোন অসম্মানের প্রতিরোধ করতে পারে। কিন্তু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রগতিশীল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যদি এই হাল হয়, কিরকম অবস্থায় আছে আমাদের দেশের অধিকাংশ স্বাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রছাত্রীরা?
তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে লিঙ্গ বৈষম্য মুক্ত করতে আমাদের দায়িত্ব নিয়ে একবার ভাবা উচিৎ, এবং অবশ্যই সেটা কোন ঘটনা ঘটার পরে না... বরং শুরুটা এখান থেকেই হোক।
No comments:
Post a Comment