Monday, July 25, 2016

Sarita Ahmed কিছু মৃত্যু থাকে কোনো স্বান্তনাতেই মেনে নেওয়া যায় না ।

Sarita Ahmed
কিছু মৃত্যু থাকে কোনো স্বান্তনাতেই মেনে নেওয়া যায় না ।
এ'কদিন মানসিক ভাবে বিধ্বস্ত ছিলাম তার এটাও একটা কারণ ।
প্রোফেসর সঞ্জীব হাজরা । আনন্দমোহন কলেজ , কলকাতা । আমার হাতে গোনা ভীষন প্রিয় এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মধ্যে একজন এবং প্রধানজন । ২০০৫ থেকে মানে সেকেন্ড ইয়ার ইংলিশ অনার্সের ছোট একটা টিউশান ব্যাচে যে মহীরুহের সান্নিধ্য পেয়েছিলাম , তাঁর ছায়া অটুট থেকেছে জীবনের নানা বাঁকে, নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েও ।
ছাত্রদল আসে, যায় । বছর বছর তাদের রকমফের হয় । যিনি বদলান না , তিনি হলেন 'স্যার'/ 'ম্যাডাম' । হাজরা স্যার ঠিক সেই বিরল গোত্রের মানুষ, যিনি শিক্ষকতার বাইরেও ছাত্র/ছাত্রীদের জীবন বদলানোর রূপকার ছিলেন অনেক ক্ষেত্রে । সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আমিও পড়ি । পড়াশুনা শেষের পরেও যে কোনো সাহায্যে , যে কোনো প্রয়োজনে কলকাতায় , আমি জানতাম , কেউ থাকুক না থাকুক 'স্যার' আছেন পাশে ।
কলেজ শেষে চাকরির পরীক্ষার সীট খুঁজতেও কলকাতার এঁদো গলি চষে ফেলেছিলাম স্যারের সঠিক গাইডেন্সে । কী অবলীলায় বলে দিতেন "অত নাম্বার বাস ধরবে । তারপর এই স্টপেজ , ডানদিক ... তারপর ..."
প্রথম চাকরি সংক্রান্ত এক নিদারুন অবিচারের বলি হয়েছিলাম যখন, তখন এই স্যারের হাতযশেই রাইটার্স বিল্ডিং থেকে বিকাশ ভবনের অলিন্দ-আলোআঁধারিতে ছুটে গিয়েছিলাম , এবং একাই লড়াইটা চালাতে পেরেছিলাম । কারণ জানতাম , স্যারের আশীর্বাদ মাথায় আছে ।
বাবার মৃত্যুতে বিধ্বস্ত আমি ও মা যখন CMC থেকে ডেথ সার্টিফিকেট আনতে খাবি খাচ্ছিলাম , বুঝতে পারছিলাম না ঠিক কি ভাবে কার্যসিদ্ধি হবে , স্যার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। শুধু দাঁড়িয়ে থাকেন নি । আমাদের সাথে করে দু দুটো অফিসে ঘুরেওছিলেন । নিজে খোঁজখবর নিয়ে সাধ্যাতীতভাবে সাহায্যও করেছেন ।
Thomas Hardy র উপর M.phil করা, শিয়ালদার সুরি লেনের ছোটখাট ঘরের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের গাদাগাদি ভীড়ের মধ্যমণি হয়ে যে বিশাল মনের মানুষটা এই সেদিনও কী প্রাণবন্তভাবে Paradise Lost পড়াচ্ছিলেন, Character of Macbeth এর নোটস দিচ্ছিলেন ; আজ আর সে মানুষ শ্বাস নিচ্ছেন না ।
নাহ, দুরারোগ্য কোনো ব্যাধি তাঁর হয় নি । কিন্তু একটা কাফ সিরাপ অকস্মাৎ অমন আকাশের মত হৃদয়ের স্পন্দন থামিয়ে দিল ।
সামান্য সর্দি-জ্বর-বুকে ব্যাথা নিয়ে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল, কিন্তু বিখ্যাত ডাক্তারের প্রেস্ক্রাইব করা Ascoril Syrup খেয়েই মানুষটা স্তব্ধ হয়ে গেলেন !
বেলভিউতে নিয়ে গেলে জানা যায় কার্ডিয়াক এরেস্ট এন্ড হার্ট ফেলিওর ।
আমার মায়ের ক্ষেত্রেও এই ওষুধ ব্যবহারের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া দেখেই বুঝেছিলাম
এই সিরাপ সবার জন্য নয় । পরে জানতে পারি একমাত্র হাঁপানির রোগী , Asthma patient ছাড়া বাকি সুস্থ মানুষ এর সাইডএফেক্ট সইতে পারেন না । এর কারণই হল এতে Asthalin , Salbutanol, Terbutaline sulphate ইত্যাদি থাকে । এগুলো সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে হার্টবিট বাড়িয়ে দেয় , তার ফলে মারাত্মকভাবে শরীর কাঁপতে থাকে , প্যাল্পিটেশান বাড়ে , ঘাম হয় অর্থাৎ কার্ডিয়াক এরেস্টের সব সিম্পটম ধরা পড়ে । non-medical person দের এসব জানার কথাও নয় ।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল , বেশীরভাগ ডাক্তার এক্সপেক্টোরেন্ট হিসেবে এটা প্রেস্ক্রাইব করেন আর রোগীরা তাঁদের ভরসায় কিনে খায় ।
সেদিন কলেজ স্ট্রীটের পাশে ৪৫ কৈলাশ বোস রোডে স্যারের স্মরণ সভায় গিয়ে সবটা জানার পরে , স্থবির হয়ে বসে ভাবছিলাম , সামান্য সর্দি-জ্বরের ওষুধ খেয়ে তার সাইড এফেক্টে এমন মৃত্যুর সঠিক প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে ! উত্তর পাই নি । ভীষণ একটা কষ্ট কেবল গলার কাছে দলা পাকাচ্ছিল আর জানান দিচ্ছিল ... আমি দ্বিতীয়বার পিতৃহীন হলাম ।

No comments:

Post a Comment