প্রাসঙ্গিক ভাবনা ॥ ড. মোঃ নূরুল আমিন
সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ ঘরে ঢুকে পড়েছে অবিলম্বে ঐক্যবদ্ধ সংলাপে বসুন
যে কোনও দেশে বিদেশী দূতাবাসগুলোর অন্যতম কাজ হচ্ছে সে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, সরকারি নীতি ও কার্যক্রম এবং সাধারণ মানুষের ওপর তার প্রভাব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জীবন যাত্রার মান ও দ্রব্যমূল্যের গতি প্রকৃতি প্রভৃতি সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ ও তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি গোপন রিপোর্ট নিজ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সরকারকে সরবরাহ করা। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী এ ধরনের রিপোর্টসমূহ শতভাগ বস্তুনিরপেক্ষ না হলেও তার কাছাকাছি, নির্ভরযোগ্য। এ ক্ষেত্রে অধিকাংশ দূতাবাসই তাদের সরকারের কাছে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যদিও তথ্য বিশ্লেষণে কেউ কেউ বস্তুনিরপেক্ষাতার নীতি পুরোপুরি অনুসরণ করেন না বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রথম শাসনামলের অর্থাৎ ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত ভারতীয় দূতাবাস এবং বিএসএসএফ প্রধানের গোপন রিপোর্টগুলো সংকলন করে তৈরি একজন ভারতীয় সাংবাদিকের “Midnight Massacre in Dhaka” পুস্তকটি প্রণিধানযোগ্য। এতে অন্তর্ভুক্ত গোলক মজুমদার কর্তৃক রুস্তমজীকে লেখা চিঠিপত্রগুলোতে তৎকালীন বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্রই ফুটে উঠেছিল। সাংবাদিক সুখরঞ্জনের ঐ পুস্তকটি একটি পাঠক নন্দিত প্রকাশনা হিসেবে সকল মহলে সুপরিচিত। দূতাবাস ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ও প্রভাবশালী দেশসমূহের গোয়েন্দা বিভাগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে অনুরূপ রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীসহ সরকারের নীতিমালা ও কার্যাবলী বিশ্লেষণ করে তাদের মতামত প্রকাশ করা হয়। মতামত প্রকাশের এই বিষয়টিকে কোনও দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হয় না, বরং সংশ্লিষ্ট সরকার তার নীতি পদ্ধতি সংশোধনে রিপোর্ট ও রিপোর্টে বর্ণিত সুপারিশমালাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। সাংবাদিকরাও তাদের প্রতিবেদন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও কলাম তৈরির উপাদান হিসেবে এগুলো ব্যবহার করেন। এতে সরকার, দেশ ও জাতি উপকৃত হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় দূতাবাস বা হাইকমিশন অথবা গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টগুলো সহজ প্রাপ্য নয়। কারোর কারোর অভিযোগ এই গোয়েন্দা সংস্থা প্রদত্ত দিকদর্শন অনুযায়ী এখন বাংলাদেশ চলছে এবং এ প্রেক্ষিতে ভারতীয় দূতাবাস অথবা গোয়েন্দা সংস্থা এই দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে এখন আগের মতো কোনও প্রতিবেদন পেশ করেন না। কেননা এই দেশটির বর্তমান যে বেহাল অবস্থা এটা তাদেরই সৃষ্টি এবং স্রষ্টা হিসেবে তারা নিজের সৃষ্টির দুরবস্থা তুলে ধরে দুর্নামের ভাগী হতে চান না। এ ধারণার সত্যতা সময়ই বলে দেবে। তবে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ নামক এই ভূখ-টির অবস্থা যে, দিন দিন খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে বিপদসংকুল অবস্থার দিকে মোড় নিচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আবার এতেও সম্ভবত কোনও সন্দেহ নেই যে, এই ধ্বংস প্রবণতার মূল টার্গেট এই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আকিদা বিশ্বাস তথা ইসলাম, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উৎস কুরআন সুন্নাহ এবং ইসলামী আন্দোলন। বিষয়টি এখন বিবেকবান মহলের কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। অবশ্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর কাছে কুরআন সুন্নাহর অনুসারী ইসলামপন্থীরাই এখনো অঘটনঘটনপটিয়সী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছেন। নিকট অতীত নয় ঘটমান বর্তমানের দু’টি দুঃখজনক ঘটনার সাক্ষী। ঢাকার গুলশানে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা হামলায় ১৭ জন বিদেশীসহ ২৯ জন লোকের নির্মম হত্যকা- আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও দেশের ভবিষ্যৎকে নিরাপদে ও নিষ্কণ্টক করার লক্ষ্যে আমরা ফলপ্রসূ কোনও পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে ইসলামকেই প্রথম টার্গেট বানিয়েছি। একজন দলনিরপেক্ষ অরাজনীতিক, নিঃস্বার্থ ইসলাম প্রচারক ভারতের ডা. জাকির নায়েকের পিস টিভি পছন্দ করেন বলে গুলশান হত্যাকাণ্ডের একজন মৃত সন্ত্রাসীর প্রমাণহীন বক্তব্য পাওয়া গেল। বাস্ ভারত সরকার পিস টিভি বন্ধ করে দিলেন। তার দু’ঘণ্টা পরেই বাংলাদেশ তার অনুসরণ করলো। জাকের নায়েক মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত কুরআন-হাদিস ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব্যসহ বেদ, বাইবেল, জেন্দাবেস্তা, ত্রিপিটক প্রভৃতিতে পারদর্শী একজন ইসলাম প্রচারক। তার অনুষ্ঠানে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খৃস্টান সকলেই অংশ নেন এবং তার যুক্তিতর্কে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হন। তার অথবা তার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেলের কথিত অনুরক্ত হবার তথ্যে, তাও মৃত সন্ত্রাসীর। যদি চ্যানেল বন্ধ করা হয় তাহলে অনেকের দাবি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেয়া হোক, কেন-না কথিত জঙ্গি নিবরাস এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। তাদের আরো দাবি হচ্ছে : ভারতীয় নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুরকে গ্রেফতার করা হোক এবং তার সকল ভিডিও বন্ধ করা হোক, কেন-না তার সাথে কথিত জঙ্গি নিবরাস নাচানাচি করেছিল।
বাংলাদেশের নায়ক ফেরদৌসকে আটক করা হোক, কেন-না তার সাথে খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে ফেসবুকে নিবরাসের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
কুয়ালালামপুরের মানস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হোক কেন-না কথিত জঙ্গিদের অন্তত দুজন সেখানে পড়াশোনা করতো।
স্কলাস্টিকা স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হোক, তার সাথে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোও, কেন-না জঙ্গিদের অনেকেই সেখানে পড়াশোনা করেছে। এভাবে নটর ডেম কলেজ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করা উচিত, সন্ত্রাসী তাহমিদ গ্রামীণ ফোনে কাজ করতো, এ প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা হোক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, রাজউক স্কুল এন্ড কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ, নিহত জঙ্গিদের অনেকেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র।
উপরোক্ত দাবিগুলো কি আসলে মানা সম্ভব? সভ্য জগত কি এটা মানতে পারে? যদি না পারে তাহলে অসমর্থিত বা সমর্থিত ব্যক্তি পছন্দের অভিযোগের আলোকে জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ করা হলো কেন? এই টিভি চ্যানেলটি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্বের বিভিন্ন দিক প্রচার করে তাই? স্টার টিভি, স্টার প্লাস, জি বাঙলা ও অন্যান্য ভারতীয় চ্যানেলের ন্যায় অশ্লীল নীল ছবি, অনৈতিক অঙ্গভঙ্গিসহ চরিত্র বিনাশী নাটক সিনেমা এবং হাতে কলমে সন্ত্রাস শিক্ষার উপকরণ ও কৌশলসহ নাটক সিমেনা, ফিল্ম প্রচার করে না এটা কি পিস টিভির অপরাধ? ভারত সরকার এই গর্হিত কাজটি করেছে, এর পেছনে হয়তো তাদের যুক্তি থাকতে পারে যে, তারা অমুসলিম দেশ তাদের দেশে ইসলাম প্রচারের সুবিধা দেয়া হবে কেন? কিন্তু বাংলাদেশে? বাংলাদেশ তো মুসলিম প্রধান দেশ। তারা কেন ভারতকে অনুসরণ করে ইসলাম শিক্ষার এই মাধ্যমটি থেকে মানুষকে বঞ্চিত করলো? এ থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়? ভবিষ্যতে ভারত যদি বলে পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল এবং তাবৎ ইসলামী সাহিত্যও কি আমরা বন্ধ করে দেব? সরকারের এই অশুভ প্রবণতা দেখে সাধারণ মানুষ কি এই ভয়ে আতঙ্কিত হচ্ছে না? এ বিষয়গুলো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার বলে আমার বিশ্বাস।
বর্তমান শতাব্দির এই সময়টি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি কঠিন সময় বলে মনে হচ্ছে। স্বয়ং মুসলমানরা এখন ইসলামের শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় সংকট আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। এই অবস্থায় মুসলিম বিশ্বের সকল দেশকে সম্মিলিতভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর অবিলম্বে পরামর্শ করা দরকার বলে আমি মনে করি।
এখানে দু’টি বিষয়। এক, সন্ত্রাস বিষাক্ত সাপের মতো আমাদের দংশন করতে শুরু করেছে। মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মদীনায়, কাবা শরীফের অতি নিকটবর্তী সৌদী নগরী জেদ্দায় এবং কাতিফে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের রাজধানী গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ জন বিদেশীসহ ২৯ জন নিহত হয়েছে। বিদেশীদের মধ্যে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৭ জনই পোশাক শিল্পের বায়ার। তাদের হত্যা করা মানে এই মর্মে সিগন্যাল দেয়া যে, বাংলাদেশের পোশাক কেনার জন্য তোমরা আর এখানে এসো না। এতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ধ্বংস হবে, যেমন অতীতে পাটশিল্প ধ্বংস হয়েছে। এই অবস্থার যদি সৃষ্টি হয় তাহলে কারা লাভবান হবে তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই কারা এর পেছনে জড়িত আছেন তা সকলেই বুঝতে পারেন, বুঝার জন্য বড় বড় ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। যারা বলেন সন্ত্রাস ইসলামপন্থীদের কাজ তারা শুধু ভ্রান্ত নয় প্রতিবন্ধীও। ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নেই, এটি শান্তির ধর্ম, এই ধর্মের অনুসারীরা পরস্পর পরস্পরের সাথে দেখা হলে একে অপরের জন্য শান্তি ও আল্লাহর রহমত কামনা করেই সম্ভাষণ করেন যা অন্য কোনও ধর্মে নেই। সম্প্রতি অন্যতম বিশ্ব সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ইসলামকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শান্তির ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে যে সনদ প্রদান করেছে তা ইসলামবিদ্বেষীদের চক্ষুকে চড়কগাছ বানালেও তা বাস্তব এবং সময়োপযোগী। ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামক সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠানটির স্থপতি কোনও মুসলমান নয়, একজন ইহুদী। এ কথাটার বাস্তবতা স্বীকারের মধ্যে সমস্যার বেশির ভাগ সমাধান নিহিত রয়েছে। এখন বাংলাদেশে ফিরে আসি।
আগেই বলেছি বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পদাঘাত করে এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর পাড়া দিয়ে ২০০৯ সালে যে সময়ে এই সরকার ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের অনুগ্রহে ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই এই ক্রান্তিকালের সূচনা, জেএমবি’র উত্থান ১৯৯৮ সালে এই সরকারের (দলের) পূর্ববর্তী আমলে এবং প্রতিবেশী দেশের আশীর্বাদে। তারা বাইরে থেকে ইসলাম ও মুসলিম জাতির ক্ষতি করতে না পেরে ভেতর থেকে এই গ্রুপটি সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞে নামিয়েছে। এখন মোসাদ-এর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথ প্রযোজনায় মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত। আমরা তাদের পেছনে নাচছি; ক্ষমতার লোভে। কিন্তু এই প্রেম যে ক্ষণস্থায়ী তা বোঝার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বাংলাদেশে ধর্মীয় সন্ত্রাসী বলতে জেএমবিকেই বুঝায় যারা সরকারি দলের অনেকেরই আত্মীয়। আবার রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসও এখানে নতুন সন্ত্রাসীর জন্ম দিচ্ছে; যার কিছু কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে পরিলক্ষিত হয়েছে। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের যে ছেলেটি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে সন্ত্রাস সৃষ্টির দায়ে ধরা পড়েছে সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসেরই সৃষ্টি বলে জানা গেছে। দশম সংসদের নির্বাচনের সময় তার পিতা ও পরিবারের অন্যরা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি জোটকে সমর্থন দিয়েছিল। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। তারা এমনকি পরিবারের মেয়েদেরও আসামী করে মিথ্যা মামলায় তাদের জর্জরিত করে তোলে। ফলে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে তারা বাধ্য হয়। ৭/৮ মাস আগে ছেলেটির পিতার আয়ের একমাত্র অবলম্বন একটি দোকানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের লুটপাটের শিকার হয়। তারা ছন্নছাড়া ভিখারী পরিবারে পরিণত হয়। এই অবস্থায় গ্রামবাসীর মতে এই ছেলে নিখোঁজ হয় এবং প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাদের ভাষায় ‘সম্ভবত সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ায়।’ এ ধরনের হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ পরিবারকে বর্তমান সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত করে। তারা বাড়িঘরে থাকতে পারে না। রুজি উপার্জনের পথ তাদের জন্য বন্ধ। এই অবস্থায় বিপথগামী হওয়া অস্বাভাবিক নয় বরং খুবই স্বাভাবিক। কেন না এ ধরনের পরিবেশ সন্ত্রাস সৃষ্টি ও লালনের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপার US Armed Series Committe এবং Senate Select Committee’র কাছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে উপরোক্ত অবস্থার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। তিনি তার প্রতিবেদনে বলেছেন, “Prime Minister Sheikh Hassina’s continuing efforts to undermine the political opposition in Bangladesh will probably provide openings for transnational terrorist groups to expand their presence in the country. Hassina and other grvernment offcials have insisted publicly that the killings of foreigners are the works of Bangladesh. Nationlist Party and Jamaat-e-Islami and are intended to discredit the government. However ISIL claimed responsibility for 11 high profile attacks on foreigners and religious minorities. Other extremists in Bangladesh including Ansarullah Bangla Team and Al-Qaida in the Indian sub-continent have claimed responsibility for killing at least 11 progressive writers and bloggers in Bangladesh since 2013.
জেমস ক্ল্যাপারের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ক্রমাগত দমন পীড়ন করছেন তাতে সম্ভবত সেটাই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিকে সম্প্রসারিত করবে। শেখ হাসিনা এবং তার কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন যে, বিদেশীদের হত্যা করার যেসকল ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে তা সরকারকে বিব্রত করার জন্য বিএনপি ও জামায়াতই ঘটাচ্ছে। আইএস আইএল এ সকল হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করছে অথচ শেখ হাসিনা ও তার কর্মকর্তারা দোষ চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। গুলশানসহ সারা বাংলাদেশের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা সত্য। একই ধরনের কথা বলেছে ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ ও ইকনমিস্টসহ খ্যাতিমান বিদেশী পত্র-পত্রিকাগুলো। এই অবস্থায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থে সরকারের উচিত পরিস্থিতির আরও অবনতি হবার আগেই দমন-পীড়ন, রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সংলাপের মাধ্যম ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। তা না হলে এই দেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে যা কারোর জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতীয় দূতাবাস বা হাইকমিশন অথবা গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টগুলো সহজ প্রাপ্য নয়। কারোর কারোর অভিযোগ এই গোয়েন্দা সংস্থা প্রদত্ত দিকদর্শন অনুযায়ী এখন বাংলাদেশ চলছে এবং এ প্রেক্ষিতে ভারতীয় দূতাবাস অথবা গোয়েন্দা সংস্থা এই দেশের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে এখন আগের মতো কোনও প্রতিবেদন পেশ করেন না। কেননা এই দেশটির বর্তমান যে বেহাল অবস্থা এটা তাদেরই সৃষ্টি এবং স্রষ্টা হিসেবে তারা নিজের সৃষ্টির দুরবস্থা তুলে ধরে দুর্নামের ভাগী হতে চান না। এ ধারণার সত্যতা সময়ই বলে দেবে। তবে শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশ নামক এই ভূখ-টির অবস্থা যে, দিন দিন খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে বিপদসংকুল অবস্থার দিকে মোড় নিচ্ছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আবার এতেও সম্ভবত কোনও সন্দেহ নেই যে, এই ধ্বংস প্রবণতার মূল টার্গেট এই দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আকিদা বিশ্বাস তথা ইসলাম, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার উৎস কুরআন সুন্নাহ এবং ইসলামী আন্দোলন। বিষয়টি এখন বিবেকবান মহলের কাছে অত্যন্ত পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। অবশ্য বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিছু তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর কাছে কুরআন সুন্নাহর অনুসারী ইসলামপন্থীরাই এখনো অঘটনঘটনপটিয়সী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছেন। নিকট অতীত নয় ঘটমান বর্তমানের দু’টি দুঃখজনক ঘটনার সাক্ষী। ঢাকার গুলশানে আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা হামলায় ১৭ জন বিদেশীসহ ২৯ জন লোকের নির্মম হত্যকা- আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান ও দেশের ভবিষ্যৎকে নিরাপদে ও নিষ্কণ্টক করার লক্ষ্যে আমরা ফলপ্রসূ কোনও পদক্ষেপ নেয়ার পরিবর্তে ইসলামকেই প্রথম টার্গেট বানিয়েছি। একজন দলনিরপেক্ষ অরাজনীতিক, নিঃস্বার্থ ইসলাম প্রচারক ভারতের ডা. জাকির নায়েকের পিস টিভি পছন্দ করেন বলে গুলশান হত্যাকাণ্ডের একজন মৃত সন্ত্রাসীর প্রমাণহীন বক্তব্য পাওয়া গেল। বাস্ ভারত সরকার পিস টিভি বন্ধ করে দিলেন। তার দু’ঘণ্টা পরেই বাংলাদেশ তার অনুসরণ করলো। জাকের নায়েক মেধাবী, বুদ্ধিদীপ্ত কুরআন-হাদিস ও তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব্যসহ বেদ, বাইবেল, জেন্দাবেস্তা, ত্রিপিটক প্রভৃতিতে পারদর্শী একজন ইসলাম প্রচারক। তার অনুষ্ঠানে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খৃস্টান সকলেই অংশ নেন এবং তার যুক্তিতর্কে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের প্রতি অনুরক্ত হন। তার অথবা তার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত টেলিভিশন চ্যানেলের কথিত অনুরক্ত হবার তথ্যে, তাও মৃত সন্ত্রাসীর। যদি চ্যানেল বন্ধ করা হয় তাহলে অনেকের দাবি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দেয়া হোক, কেন-না কথিত জঙ্গি নিবরাস এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। তাদের আরো দাবি হচ্ছে : ভারতীয় নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুরকে গ্রেফতার করা হোক এবং তার সকল ভিডিও বন্ধ করা হোক, কেন-না তার সাথে কথিত জঙ্গি নিবরাস নাচানাচি করেছিল।
বাংলাদেশের নায়ক ফেরদৌসকে আটক করা হোক, কেন-না তার সাথে খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে ফেসবুকে নিবরাসের ছবি পাওয়া গিয়েছিল।
কুয়ালালামপুরের মানস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হোক কেন-না কথিত জঙ্গিদের অন্তত দুজন সেখানে পড়াশোনা করতো।
স্কলাস্টিকা স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হোক, তার সাথে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোও, কেন-না জঙ্গিদের অনেকেই সেখানে পড়াশোনা করেছে। এভাবে নটর ডেম কলেজ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করা উচিত, সন্ত্রাসী তাহমিদ গ্রামীণ ফোনে কাজ করতো, এ প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করা হোক, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, রাজউক স্কুল এন্ড কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারণ, নিহত জঙ্গিদের অনেকেই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র।
উপরোক্ত দাবিগুলো কি আসলে মানা সম্ভব? সভ্য জগত কি এটা মানতে পারে? যদি না পারে তাহলে অসমর্থিত বা সমর্থিত ব্যক্তি পছন্দের অভিযোগের আলোকে জাকির নায়েকের পিস টিভি বন্ধ করা হলো কেন? এই টিভি চ্যানেলটি ইসলামী জীবন ব্যবস্থার শ্রেষ্ঠত্বের বিভিন্ন দিক প্রচার করে তাই? স্টার টিভি, স্টার প্লাস, জি বাঙলা ও অন্যান্য ভারতীয় চ্যানেলের ন্যায় অশ্লীল নীল ছবি, অনৈতিক অঙ্গভঙ্গিসহ চরিত্র বিনাশী নাটক সিনেমা এবং হাতে কলমে সন্ত্রাস শিক্ষার উপকরণ ও কৌশলসহ নাটক সিমেনা, ফিল্ম প্রচার করে না এটা কি পিস টিভির অপরাধ? ভারত সরকার এই গর্হিত কাজটি করেছে, এর পেছনে হয়তো তাদের যুক্তি থাকতে পারে যে, তারা অমুসলিম দেশ তাদের দেশে ইসলাম প্রচারের সুবিধা দেয়া হবে কেন? কিন্তু বাংলাদেশে? বাংলাদেশ তো মুসলিম প্রধান দেশ। তারা কেন ভারতকে অনুসরণ করে ইসলাম শিক্ষার এই মাধ্যমটি থেকে মানুষকে বঞ্চিত করলো? এ থেকে কী শিক্ষা পাওয়া যায়? ভবিষ্যতে ভারত যদি বলে পবিত্র কুরআন, হাদিস, ফিকাহ, উসুল এবং তাবৎ ইসলামী সাহিত্যও কি আমরা বন্ধ করে দেব? সরকারের এই অশুভ প্রবণতা দেখে সাধারণ মানুষ কি এই ভয়ে আতঙ্কিত হচ্ছে না? এ বিষয়গুলো গভীরভাবে ভেবে দেখা দরকার বলে আমার বিশ্বাস।
বর্তমান শতাব্দির এই সময়টি মুসলিম উম্মাহর জন্য একটি কঠিন সময় বলে মনে হচ্ছে। স্বয়ং মুসলমানরা এখন ইসলামের শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় সংকট আরো বেশি ঘনীভূত হয়েছে। এই অবস্থায় মুসলিম বিশ্বের সকল দেশকে সম্মিলিতভাবে উদ্ভূত পরিস্থিতির ওপর অবিলম্বে পরামর্শ করা দরকার বলে আমি মনে করি।
এখানে দু’টি বিষয়। এক, সন্ত্রাস বিষাক্ত সাপের মতো আমাদের দংশন করতে শুরু করেছে। মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র পবিত্র মদীনায়, কাবা শরীফের অতি নিকটবর্তী সৌদী নগরী জেদ্দায় এবং কাতিফে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের রাজধানী গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ১৭ জন বিদেশীসহ ২৯ জন নিহত হয়েছে। বিদেশীদের মধ্যে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৭ জনই পোশাক শিল্পের বায়ার। তাদের হত্যা করা মানে এই মর্মে সিগন্যাল দেয়া যে, বাংলাদেশের পোশাক কেনার জন্য তোমরা আর এখানে এসো না। এতে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প ধ্বংস হবে, যেমন অতীতে পাটশিল্প ধ্বংস হয়েছে। এই অবস্থার যদি সৃষ্টি হয় তাহলে কারা লাভবান হবে তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই কারা এর পেছনে জড়িত আছেন তা সকলেই বুঝতে পারেন, বুঝার জন্য বড় বড় ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। যারা বলেন সন্ত্রাস ইসলামপন্থীদের কাজ তারা শুধু ভ্রান্ত নয় প্রতিবন্ধীও। ইসলামে সন্ত্রাসের স্থান নেই, এটি শান্তির ধর্ম, এই ধর্মের অনুসারীরা পরস্পর পরস্পরের সাথে দেখা হলে একে অপরের জন্য শান্তি ও আল্লাহর রহমত কামনা করেই সম্ভাষণ করেন যা অন্য কোনও ধর্মে নেই। সম্প্রতি অন্যতম বিশ্ব সংস্থা ইউনেস্কো কর্তৃক ইসলামকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শান্তির ধর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করে যে সনদ প্রদান করেছে তা ইসলামবিদ্বেষীদের চক্ষুকে চড়কগাছ বানালেও তা বাস্তব এবং সময়োপযোগী। ইসলামিক স্টেট বা আইএস নামক সন্ত্রাসী প্রতিষ্ঠানটির স্থপতি কোনও মুসলমান নয়, একজন ইহুদী। এ কথাটার বাস্তবতা স্বীকারের মধ্যে সমস্যার বেশির ভাগ সমাধান নিহিত রয়েছে। এখন বাংলাদেশে ফিরে আসি।
আগেই বলেছি বর্তমানে বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে পদাঘাত করে এবং মানুষের মৌলিক অধিকারের ওপর পাড়া দিয়ে ২০০৯ সালে যে সময়ে এই সরকার ফখরুদ্দীন-মইনউদ্দিনের অনুগ্রহে ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকেই এই ক্রান্তিকালের সূচনা, জেএমবি’র উত্থান ১৯৯৮ সালে এই সরকারের (দলের) পূর্ববর্তী আমলে এবং প্রতিবেশী দেশের আশীর্বাদে। তারা বাইরে থেকে ইসলাম ও মুসলিম জাতির ক্ষতি করতে না পেরে ভেতর থেকে এই গ্রুপটি সৃষ্টি করে ধ্বংসযজ্ঞে নামিয়েছে। এখন মোসাদ-এর সাথে যুক্ত হয়ে যৌথ প্রযোজনায় মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করার কাজে লিপ্ত। আমরা তাদের পেছনে নাচছি; ক্ষমতার লোভে। কিন্তু এই প্রেম যে ক্ষণস্থায়ী তা বোঝার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বাংলাদেশে ধর্মীয় সন্ত্রাসী বলতে জেএমবিকেই বুঝায় যারা সরকারি দলের অনেকেরই আত্মীয়। আবার রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসও এখানে নতুন সন্ত্রাসীর জন্ম দিচ্ছে; যার কিছু কিছু লক্ষণ ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে পরিলক্ষিত হয়েছে। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের যে ছেলেটি শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের কাছে সন্ত্রাস সৃষ্টির দায়ে ধরা পড়েছে সে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসেরই সৃষ্টি বলে জানা গেছে। দশম সংসদের নির্বাচনের সময় তার পিতা ও পরিবারের অন্যরা আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপি জোটকে সমর্থন দিয়েছিল। নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ এর প্রতিশোধ নিতে শুরু করে। তারা এমনকি পরিবারের মেয়েদেরও আসামী করে মিথ্যা মামলায় তাদের জর্জরিত করে তোলে। ফলে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে তারা বাধ্য হয়। ৭/৮ মাস আগে ছেলেটির পিতার আয়ের একমাত্র অবলম্বন একটি দোকানে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের লুটপাটের শিকার হয়। তারা ছন্নছাড়া ভিখারী পরিবারে পরিণত হয়। এই অবস্থায় গ্রামবাসীর মতে এই ছেলে নিখোঁজ হয় এবং প্রতিশোধ নেয়ার জন্য তাদের ভাষায় ‘সম্ভবত সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ায়।’ এ ধরনের হাজার হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ পরিবারকে বর্তমান সরকার শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাসের শিকারে পরিণত করে। তারা বাড়িঘরে থাকতে পারে না। রুজি উপার্জনের পথ তাদের জন্য বন্ধ। এই অবস্থায় বিপথগামী হওয়া অস্বাভাবিক নয় বরং খুবই স্বাভাবিক। কেন না এ ধরনের পরিবেশ সন্ত্রাস সৃষ্টি ও লালনের উর্বর ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়।
মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপার US Armed Series Committe এবং Senate Select Committee’র কাছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তাতে উপরোক্ত অবস্থার প্রতিধ্বনি পাওয়া যায়। তিনি তার প্রতিবেদনে বলেছেন, “Prime Minister Sheikh Hassina’s continuing efforts to undermine the political opposition in Bangladesh will probably provide openings for transnational terrorist groups to expand their presence in the country. Hassina and other grvernment offcials have insisted publicly that the killings of foreigners are the works of Bangladesh. Nationlist Party and Jamaat-e-Islami and are intended to discredit the government. However ISIL claimed responsibility for 11 high profile attacks on foreigners and religious minorities. Other extremists in Bangladesh including Ansarullah Bangla Team and Al-Qaida in the Indian sub-continent have claimed responsibility for killing at least 11 progressive writers and bloggers in Bangladesh since 2013.
জেমস ক্ল্যাপারের রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ক্রমাগত দমন পীড়ন করছেন তাতে সম্ভবত সেটাই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর উপস্থিতিকে সম্প্রসারিত করবে। শেখ হাসিনা এবং তার কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন যে, বিদেশীদের হত্যা করার যেসকল ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে তা সরকারকে বিব্রত করার জন্য বিএনপি ও জামায়াতই ঘটাচ্ছে। আইএস আইএল এ সকল হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করছে অথচ শেখ হাসিনা ও তার কর্মকর্তারা দোষ চাপাচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। গুলশানসহ সারা বাংলাদেশের ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা সত্য। একই ধরনের কথা বলেছে ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ ও ইকনমিস্টসহ খ্যাতিমান বিদেশী পত্র-পত্রিকাগুলো। এই অবস্থায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থে সরকারের উচিত পরিস্থিতির আরও অবনতি হবার আগেই দমন-পীড়ন, রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সংলাপের মাধ্যম ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা। তা না হলে এই দেশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যেতে পারে যা কারোর জন্যই কল্যাণ বয়ে আনবে না।
No comments:
Post a Comment