Friday, July 1, 2016

Chhandak Chatterjee এক মৃত্যুপুরীর নাম জাদুগোড়া...বারে বারে ফিরে ফিরে যাওয়া । দুষিত জল ঢোক গিলে গিলে খাওয়া, তেজস্ক্রিয় খনির ধারে ধারে ঘুরে বেড়ানো । বুক ভরে শ্বাস টানা । লাল বিষ জলে ডুবে বসে থাকা । ক্ষতগুলোকে জিইয়ে রাখা । একটা অসুস্থতার মধ্যে বাঁচা । নিজের চামড়া নিজের দাঁত দিয়ে ছেঁড়া ছাড়া উপায় নেই আমার ।

একটি আবেদন
১।জাদুগোড়া’য় এবার যখন গেলাম তখন আগের বারের মানুষ জনের ঘর খালি । তারা মারা গেছেন । ঠিক করেছি ছবির ৪ টে বাচ্চার চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থ সাহায্য করবো । ওরা যাতে কটক অথবা কলকাতায় চিকিৎসা করাতে পারে । যারা অর্থ সাহায্য করতে চান ইনবক্স করবেন । আমি অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠিয়ে দেব
২। একটা পোষ্ট কার্ড করা হচ্ছে বিষয়টা বিস্তারে জানিয়ে, সেটা কেউ নিতে চাইলে জানাবেন । কেবল মাত্র ওটা যেকোন পোষ্ট অফিসে ফেললেই চলে যাবে ভারত সরকারের কাছে ।
৩। জুলাই মাস জুড়ে নানান জায়গায় তেজস্ক্রিয় খনির ভয়াবহতা নিয়ে ক্যম্পেন হবে, কেউ যদি চান যোগাযোগ করবেন ।
এক মৃত্যুপুরীর নাম জাদুগোড়া...বারে বারে ফিরে ফিরে যাওয়া । দুষিত জল ঢোক গিলে গিলে খাওয়া, তেজস্ক্রিয় খনির ধারে ধারে ঘুরে বেড়ানো । বুক ভরে শ্বাস টানা । লাল বিষ জলে ডুবে বসে থাকা । ক্ষতগুলোকে জিইয়ে রাখা । একটা অসুস্থতার মধ্যে বাঁচা । নিজের চামড়া নিজের দাঁত দিয়ে ছেঁড়া ছাড়া উপায় নেই আমার ।
ইউরেনিয়ামের খনি চলছে ৫০ বছর হয়ে গেল । UCIL মানুষ মারার কল ফেঁদেছে। যে নিউক্লিয়ার বর্জ্য বিশেষ বাক্সোয় করে সমুদ্রের তলায় রেখে আসবার কথা তা ফেলা হচ্ছে পাহাড়ের গায়ে । ছোট্ট পাহাড়ের গ্রাম জাদুগোড়া । তিনদিকে পাহাড় ছিলই, একদিকে ইট দিয়ে কংক্রিটের পাহাড় করে নিউক্লিয়ার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে । ওখানের আদিবাসীরা তেজস্ক্রিয় বর্জ্য ঝুড়ি করে মাথায় নিয়ে ফেলে আসেন ডাম্পারে, যে পোশাক পরে খনিতে কাজ করেন সেই পোশাকেই বিবি বাচ্চা কেআদর করেন, দিনের শেষে খাওয়ার জলের পুকুরেই ধোয়া হয় সেই সব দস্তানা । এরপর নদীতে চুইয়ে পরে তেজস্ক্রিয় তরল । বৃষ্টি হলে উপচে আসে বাড়ির দালানে । গ্রামের পর গ্রাম মানুষের রোগ । ক্যান্সার, থ্যালাসেমিয়া এবং বিশেষত বিকলাঙ্গ বাচ্চা প্রসব । আগের বছর যাদের দেখা পেয়েছিলাম, তাদের কুঁড়ে গুলো রয়ে গেছে, দড়ি বেঁধে ঝুলে পড়েছেন মুরমু, সরেন’রা ।

চাটিকোচা গ্রামের মানুষ জল খেতেন ঝর্না থেকে সেই ঝর্না তেও মিশেছে মারনবিষ । গ্রামে গিয়ে জিজ্ঞাসা ক রলাম এই গ্রামে বিকলাঙ্গ বাচ্চাটির বাড়ি কোথায়,একটা বাচ্চা নিজেই সেই ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তার পা দেখালো, পা টা জিলিপিরপ্যাচের মতো । পরের পর বাড়িতে কেউ সুস্থ নেই । মায়েরা মরা বাচ্চা প্রসব করেন । পায়ে হাতে ৫ টা আঙুলের জায়গায় কারু ৭টা আঙুল । পা গুলো হাতের মতো । ইউরেনিয়াম উত্তোলন হচ্ছে, বাচ্চাদের হৃদয়ের বিনিময়ে । আদিবাসী মানুষ জন ভাবেন, জাদুগোড়ায় বুঝি ভুতে ভর করেছে । কিছু বছর আগে পর্যন্ত ঝারফুক চলতোই কারন কারু বয়স ৪০ হলেও তাকে দেখতে ৫ বছরের শিশুরমতো । কারুর পায়ের আঙুল গুলো হাঁসের পায়ের মতো জোড়া । আস্তে আস্তে সব মা বন্ধা হয়ে যাচ্ছেন, দেখা দিচ্ছে ক্যান্সার । অনেক দিন পর সরল গ্রামবাসীরাবুঝতে পারেন এটা ইউরেনিয়াম খনির ফল । আর কারখানার বিরুদ্ধে গেলে জীবন শেষ । ফলে মানুষ ৩০-৪০ বছর মরে গিয়েও বেঁচে থাকে । হিরোশিমা দিবসে স্থানীয় স্কুলে তেজস্ক্রিয়তা বিরোধী সচেতনতা অনুষ্ঠান করতে গিয়ে স্কুলটাই উঠে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিলো । প্রধান শিক্ষককে প্রায় জরিমানা দিয়ে তার চাকরি বাঁচাতে হয়েছে ।
জাদুগোড়ার মেয়েদের কেউ বিয়ে করছে না তারা বাঁজা বলে । মেয়েদের আঙুল গুলো জোড়া বলে বাবাকে পন দিতে হচ্ছে বহুগুন ।
লড়ছেন কন্যা হারা পিতা ছতুয়া দাস, তার ১২ বছরের সম্পূর্ণ বিকলাঙ্গ মেয়েকে তিনি বাঁচাতে পারেনি । এতো খিধে UCIL’র । তারা মাঝে মধ্যেই জলুস (মিছিল)বের করেন কিন্তু ভয়ানক ক্ষমতাশালী কেন্দ্রীয় সরকারের খনির বিরুদ্ধে কথা বললে গুন্ডা লেলিয়ে দেওয়া হয় । আগের বারে গিয়ে যাদের ঘরে উঠেছিলাম, সেই চাটিকোঁচার পঞ্চায়েত প্রধান, যিনি শপথ নিয়েছিলাম জান দেবেন তবু জাদুগোডা দেবেন না, তিনি বিকিয়ে গেছেন মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে । যুদ্ধ তবু জারী আছে পাহাড়ের কোলে কোলে গোপন আস্তানায় ।

No comments:

Post a Comment