ওখানকার হিন্দুদের কেউ কেউ আসলে মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়েই ‘মন্দিরের দাবি’ তুলছেন। সত্যি সত্যিই এটা মন্দিরের জায়গা হলে মসজিদ নির্মাণের আগে ক্লাবের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ উঠেনি কেন?
Mohammad Basirul Haq Sinha mohammad_b_haq@yahoo.co.uk |
ভিডিওটি ইউটিউবে পেলাম। গেন্ডারিয়ায় মসজিদ নির্মাণ এবং বাঁধা দেয়ার ওপর কয়েকজন এলাকাবাসীর বক্তব্য। একজন হিন্দুও আছেন। মিডিয়াতে এই খবর আসছে না ওভাবে। আর এলেও নির্ভর করার মতো সঠিক কোনো তথ্য পাওয়ার আশা করে লাভ নেই। যা পাওয়া যাবে ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র’র চেয়ে ভাল কিছু হবে না! তাই এসব ‘র’ (গোয়েন্দা সংস্থা নয়!) ভিডিও দেখে ধারণা, অনুমানই ভরসা।
তো, আগের ভিডিও দেখে এবং এটা দেখার পর যেটা মনে হল- মসজিদ নির্মাণকারী পক্ষ, বাধাদানকারী পক্ষ এবং পুলিশ- তিনপক্ষেই ঘাপলা আছে। পুলিশের বাড়াবাড়িটা মাত্রাতিরিক্ত এবং এর কারণেই এটা এত বড় আকার ধারণ করছে।
সরকারি লিজের বা বেদখলী জায়গা দখল করার কৌশল হিসেবে ধর্মীয় স্থাপনা- মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা- ইত্যাদি নির্মাণ ধর্মনির্বিশেষে উপমহাদেশীয় ঐতিহ্য। এ ক্ষেত্রেও ধারণা করা যাচ্ছে, কথিত ওই সমাজকল্যাণ ক্লাব এই ‘মহৎ’ কাজটিই করতে চেয়েছেন। এক খন্ড জমির ৫/৭ ভাগের এক ভাগে সম্মুখ দিকে একটা মসজিদ বানিয়ে পেছনেরটুকুর ওপর দখলদারিত্ব হালাল করা আরকি।
অবশ্য ওই এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক মসজিদের সত্যিই অভাব হয়ে থাকলে নতুন একটা মসজিদ নির্মাণের পাবলিক ডিমান্ডও থাকতে পারে। এই সেন্টিমেন্ট ক্লাবওয়ালাদের জন্য শাপে বর হয়েছে।
আবার যেহেতু এত বছর ধরে ওই জায়গাটা ক্লাবের দখলে আছে, এবং এই দীর্ঘ সময়ে কোনো হিন্দু লোকজন তাদের ‘মন্দিরের জায়গা ক্লাব দখল করে রেখেছে’- এমন কোনো দাবি নিয়ে হাজির হননি, কিন্তু মসজিদ নির্মাণ করতে যাওয়ার সময়ই শুধু মনে হল ‘এটা মন্দিরের জায়গা’, সেহেতু ধরে নেয়াই যায় যে, ওখানকার হিন্দুদের কেউ কেউ আসলে মসজিদ নির্মাণের বিরোধিতা করতে গিয়েই ‘মন্দিরের দাবি’ তুলছেন। সত্যি সত্যিই এটা মন্দিরের জায়গা হলে মসজিদ নির্মাণের আগে ক্লাবের বিরুদ্ধে দখলের অভিযোগ উঠেনি কেন?
বাংলাদেশে উদীয়মান এলিট হিন্দু শ্রেণীর অনেকের মধ্যে এমন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ চরমভাবে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে হচ্ছে, বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে তারা ক্ষমতাসীনদেরকে ব্যবহার করে একটা সুযোগ নিলেন গেন্ডারিয়ায়।
বাংলাদেশে উদীয়মান এলিট হিন্দু শ্রেণীর অনেকের মধ্যে এমন ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ চরমভাবে আছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মনে হচ্ছে, বর্তমান স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে তারা ক্ষমতাসীনদেরকে ব্যবহার করে একটা সুযোগ নিলেন গেন্ডারিয়ায়।
এর সাথে হয়তোবা দীর্ঘ দিন ধরে উভয় কমিউনিটির কিছু মানুষের মধ্যে পরস্পরের প্রতি কারণে অকারণে জন্ম নেয়া ক্ষোভ ধর্মীয় দ্বন্দ্বটিকে ফুয়েল দিয়ে আরো গাড়োভাবে ধর্মীয় রূপ দিয়েছে।
তবে বিবদমান দুইপক্ষের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে মূল সমস্যা চিহ্নিত করার মাধ্যমে খুব সহজেই দোষী/নির্দোষ নির্ধারণ করে সমাধান করা যেত। আর স্পর্শকাতর ইস্যু হওয়ায় এভাবে সমাধান করার বিকল্প কিছু নেই। কিন্তু পুলিশের জনৈক তামিল ভিলেনীয় মোচওয়ালা কর্তৃক পিস্তল উচিয়ে মুসল্লীদের দাবড়ানো এবং কিলঘুষি মারার দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে মুসলমানের ধর্মীয় আবেগকে তিনি বা তার সাঙ্গপাঙ্গরা তোড়াই কেয়ার করেন।
পুলিশের এই বাড়াবাড়ির কারণে ঘটনাটি এত হাইলাইট হল, এবং যেহেতু বর্তমান সরকার কর্তৃক হিন্দুদেরকে কমবেশি ফেভার দেয়ার উদাহরণ জনসমক্ষে (এবং সেই জনগনের মেজরিটি মুসলিম) আছে, ফলে এই সরকারেরই একটি বাহিনী কর্তৃক মুসলমানদের ধর্মীয় স্থাপনা নির্মাণে বাধা (সেই বাধা দেয়াটা যতই আইনগতভাবে সঠিক হোক) এবং হয়রানি করা প্রৃকতপক্ষে সারাদেশের হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের বিরূপ মনোভাব তৈরিতে সহায়তা করবে। অনেকে এটাকে এভাবে ব্যাখ্যা করবে- ‘হিন্দুদের কারণে দেশে এখন মসজিদও বানানো যাচ্ছে না!’
হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ নামীয় সুবিধাভোগী কিছু দুষ্ট হিন্দু ব্যক্তির পক্ষ হয়ে বাড়াবাড়ি করে লাখ লাখ খেটে খাওয়া, অতি সাধারণ হিন্দু, যারা কারো সাতে-পাঁচে নেই, তাদেরকে নতুন করে বিদ্বেষের ঝুঁকিতে ফেলাই ‘আওয়ামী সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষন’?
ওইদিকে সুযোগসন্ধানী ক্লাব পরিচালকরা এখন সাচ্চা মুসলিম সেজে আলেম উলামাদের বিবৃতির খাতিরে সম্ভবত খুব সহজেই মসজিদ নির্মাণ করিয়ে নিয়ে ‘সুখে শান্তি বসবাস করিতে শুরু করিবে!’
মসজিদ নির্মিত হোক, বা না হোক, এই ঘটনাটি গেন্ডারিয়ার ওই এলাকাটি তো বটে, সারাদেশে দুই ধর্মের মানুষের মধ্যে তিক্ততা তৈরির আরেকটি উপলক্ষ হবে, যার পুরো কৃতিত্ব সেই মোচওয়ালা তামিল হিরুর (নাকি ভিলেনের!)।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এখানে তুলে ধরা মতামতগুলো মোটেও কোনো ‘দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত নিশ্চিত তথ্য’ নয়! আগেই বলা হয়েছে অবিশ্বস্ত ও ক্ষমতালেহী মিডিয়ার এই দেশে আমাদের মতো সংবাদ-গ্রাহকদেরকে রাস্তাঘাটে পাওয়া র মেটেরিয়েল সংগ্রহ করে নিজের বুদ্ধি খরচ করে অনুমান ধারণা কাজে লাগিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়। এখানে তাই করা হয়েছে)
No comments:
Post a Comment