Hindol Bhattacharjee বাবা মৃত্যুর আগের মুহূর্তে আমার হাত ধরে ছিলেন
আমার বাবা সেতার বাজাতেন। প্রতিদিন নিয়ম করে রাত হলেই। মনে আছে, খুব ছোটবেলায় বাবার সিগারেট এবং সেতারের মধ্যে কোলের কাছে বসে থাকতাম। অদ্ভুত সেই ধোঁয়ার জালের মধ্যে এক একটা রাগ, আলাপ, ঝালা প্রবেশ করত মনের কোনো এক গোপন কুঠুরীতে। রোজ, আমার মনে ছন্দ ঢুকত। সুর ঢুকত। সিগারেটের ধোঁয়াও। বাবার এক অদ্ভুত উদাসীনতা ছিল নিজের কাজ সম্পর্কে। সেদিন আমার এক বন্ধু, সৌমালী, বলল হঠাৎ অসামান্য একটা কথা- ও নাকি ছোটবেলায় ক্যালাইডোস্কোপ হতে চাইত। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ে গেল আমার বাবার কথা। বাবাও কী ক্যালাইডোস্কোপ হতে চেয়েছিলেন? রঞ্জি লেভেলের ক্রিকেটার, নিয়মিত সিরিয়াস কবিতা লেখা ( পুরনো দেশ, অমৃতবাজার ইত্যাদিতে আজো বাবার কবিতা আছে), সেতারে শ্যাম গাঙ্গুলির ছাত্র, নিজে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন শিক্ষক ( এখনো বাঙুর স্কুলের পুরনো ছাত্ররা ভালবাসে) এবং একজন দায়িত্ববান বাবা, ফ্যামিলিম্যান-- ক্যালাইডোস্কোপ ছাড়া আর কী? কোন কাজই বিশেষ ভাবে করে গিয়ে সাফল্যলাভ করতে চাননি। হয়ত জীবনের এই নানারূপের আনন্দটাই মুখ্য ছিল। কোনো কবিতার খাতা খুঁজে পাইনি আমি। শুনেছি তুষার রায় খুব বন্ধু ছিলেন বাবার।
বাবা যেদিন হঠাৎ চলে যান, তার আগের দিন আমার সঙ্গে তুমুল ঝামেলা। কেন আমি পড়াশোনা ছেড়ে নকশাল রাজনীতি করছি স্কুলে পড়তে পড়তে? বাবা বলতেন -- আগে পড়। আগে জান। তারপর জীবন নিয়ে যা খুশি করিস। আমকে বাবাই প্রথম নষ্ট করেন বিনয় মজুমদার আর আউটসাইডার পড়িয়ে।
বাবা মৃত্যুর আগের মুহূর্তে আমার হাত ধরে ছিলেন। আমি তাই বাবার তথাকথিত শ্রাদ্ধ করিনি। কখনো তাঁ্র ছবিতে মালাও দি না। কারণ ছবি তো রূপ মাত্র। আসলে তো উনি ক্যালাইডোস্কোপ।
মৃত্যুও তো তারই একটা রূপ। তাই না? সুর যেমন আলাপ থেকে ঝালা হয়ে দিগন্তে ঝাঁপায়।
এখনো বাবার থেকে আমি ছোট। কয়েক বছর পর বাবার চেয়ে বয়স বাড়বে। কিন্তু বাবা একটা কথা বলতেন। সেই কথা আজো বাজে মনে -- ব্যর্থ ভাবে সফল হওয়ার চেয়ে সফল ভাবে ব্যর্থ হওয়া অনেক ভাল। ক্যালাইডোস্কোপরাই এমন কথা বলতে পারেন।
No comments:
Post a Comment