Wednesday, June 15, 2016

এটা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ। এটা দলিতদের জেহাদ। এটা সমাজের উল্টোদিকের জেহাদ। সেলাম কমরেড!হাজার হাজার বছর ধরে পায়ের তলায় চেপটে দাবিয়ে রাখবো, আর যখন ওরা পায়ের তলা থেকে বেরিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করবে তখন বলবো 'অ্যাঁহ্ তোর গায়ে বড্ড গন্ধ' — এইভাবে আর আটকে রাখা যাবে না।

Aniket Chatterjee 
হাজার হাজার বছর ধরে পায়ের তলায় চেপটে দাবিয়ে রাখবো, আর যখন ওরা পায়ের তলা থেকে বেরিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করবে তখন বলবো 'অ্যাঁহ্ তোর গায়ে বড্ড গন্ধ' — এইভাবে আর আটকে রাখা যাবে না।
অনেক সহ্য করেছে ওরা। বুঝে গেছে, দারিদ্র্যের গন্ধ ওদের গায়ে থাকতে পারে, অশিক্ষার গন্ধ ওদের গায়ে থাকতে পারে, কিন্তু তার জন্য দায়ী এই অংবং আওড়ানো সুখী ভন্ড পৈতেধারী টিকিধারী উচ্চবর্ণের দল। এই শ্রেণি কেবল নিজের সুবিধা ভোগের স্বার্থে সবরকমভাবে টিপেটুপে শিশির মধ্যে পুরে রেখে দিয়েছে তাদের— নইলে তারাও আজ জ্ঞানে বুদ্ধিতে সমাজের প্রথম সারিতেই থাকতো।

আমি মনে করি, 'দলিত' শব্দটার উৎপত্তি বর্ণবাদ থেকে হলেও এখন এই শব্দটা কেবল সেই পরিসরে আটকে নেই। আটকে থাকা সম্ভবও নয়। সমাজের পরিসর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শোষণের, অপমানের, ঘৃণার নতুন নতুন পন্থা, নতুন ছদ্মবেশের উদ্ভব ঘটেছে। মূল সমীকরণটা একই থেকে গেছে—কয়েকজন মানুষের দ্বারা বহুসংখ্যক মানুষের ওপর দাদাগিরি। কিন্তু শোষকের জায়গায় উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা তো আছেই, তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে মাড়বারসন্তানেরা এবং নতুন উঠে আসা পুঁজিপতি শ্রেণি—যারা রাষ্ট্রের সাথে হাত মিলিয়ে ছবি তুলছে, আর পেজ ওয়ানের হেডলাইন বাগিয়ে নির্বিঘ্নে সাধারণ মানুষের শ্রমশোষণ করছে।
তাই দলিত মানেই কেবল নিম্নশ্রেণির মানুষেরা নয় এখন। দলিত বলতে আমরা বুঝবো প্রতিটি সেই মানুষকে, যাদেরকে এই সমাজ নিজের সচেতনে অবচেতনে প্রতিনিয়ত হেয় করছে, ছোটো করছে, এবং ব্যবহার করে নিচ্ছে নিজের সুবিধামত। দলিতশ্রেণির লড়াইয়ের সঙ্গে একাত্ম বোধ করছে নারীরা, রূপান্তরকামী মানুষেরা এবং সাধারণ পড়ে পড়ে মার খাওয়া মধ্যবিত্ত মানুষ। দলিতরাই দলে দলে ভারী হচ্ছে, প্রস্তুত হচ্ছে নিজেদের প্রাপ্য কড়ায়গন্ডায় বুঝে নিতে।
তাই, হায়দ্রাবাদ ইউনিভার্সিটিতে যখন দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলাকে মাসের পর মাস মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, হোস্টেল থেকে বের করে দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় এবং তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়—তখন তার এই নৃশংস হত্যার পর সাফাই দেবার জন্য 'দলিত ছিল কী ছিল না' এই প্রশ্ন অবান্তর। তার সমাজ তাকে পক্ষপাতের মাধ্যমে সবার থেকে হীন প্রতিপন্ন করে তাকে মানসিক আঘাত করে গেছে একের পর এক। তার পদবীর ওপর নির্ভর করে তাকে অমানবিকভাবে আলাদা শ্রেণিতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল— দলন করা হয়েছিল বাঁকাচোখ আর অপমানসূচক মন্তব্যের পায়ের তলায়। তাই সে অবশ্যই একজন দলিত ছিল, সে তার জাতিগত পরিচয় যাই হোক না কেন।
তাই, তার হত্যার প্রতিবাদে যখন প্রফেসর কে.ওয়াই রত্নম এবং তথাগত সেনগুপ্ত তার পাশে দাঁড়িয়েছেন, সমাজের বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন—তখন তা নিজেদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে নয়; ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতিষ্ঠানটিতে যেপ্রকার নিপীড়ন-লাঞ্ছনা চলে, তা অন্তর থেকে অনুভব করতে পেরে সমব্যথী হয়েছেন। তাঁরা অন্যান্য শিক্ষকদের মত প্রতিষ্ঠানের ধ্বজা আঁকড়ে থাকেননি, বরং ব্রাহ্মণ্যবাদী দলনে নিজেদেরকে দলিতের আসনে বসিয়ে ছাত্রদের হাত ধরেছেন। তাঁরা বুঝেছেন, একজন শিক্ষকের কাছে প্রথম এবং সর্বপ্রথম দায়িত্ব তাঁর ছাত্ররা—তাদের উন্নতি, তাদের ভালো থাকা।
তাই তাঁরা অনশন করছেন। তাঁরা লড়ছেন। লড়ছেন ছাত্রদের পাশে। লড়ছেন আমাদের পাশে। লড়ছেন দলিত হয়ে দলিতদের পাশে।
এটা ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে জেহাদ।
এটা দলিতদের জেহাদ।
এটা সমাজের উল্টোদিকের জেহাদ।
সেলাম কমরেড!

No comments:

Post a Comment