Thursday, June 2, 2016

তদরিদ্র বাবা মার ৫ মেয়ে, অথচ গায়ে কাজ নেই। তাই কলকাতায় সব মেয়েকেই কাজে পাঠানো।Munmun Biswas submits ground zero report on the lot of women working as Domestic help and their plight!

Munmun Biswas 
বন্দনা মহাকুর, বয়েস ১৫ বছর, বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাতন। হতদরিদ্র বাবা মার ৫ মেয়ে, অথচ গায়ে কাজ নেই। তাই কলকাতায় সব মেয়েকেই কাজে পাঠানো। ছোট মেয়ে বন্দনাকে দমদম শেঠবাগান নিবাসী শ্রাবণী সাহা সঞ্জয় সাহার বাড়িতে ২৪ ঘণ্টার বাচ্চা দেখার কাজে দেয় মাস ছয়েক আগে। এই ছমাসে একবারই কলকাতার বাসন্তি কলনিতে দিদির বাড়ি এসেছিল বন্দনা। মাইনেও মিলেছে মাত্র একমাসের। একটা মেয়ের পেটের চিন্তা করতে হচ্ছেনা দেখেই খুশি ছিল গরীব বাবা মা। কিন্তু গতমাসে হঠাত ফোন, বাবা-মা-দিদি কে ডেকে শ্রাবণী সাহা জানায়, তোমাদের মেয়ে দেড় লাখ টাকার সোনার গয়না চুরি করে তোমাদের দিয়ে এসেছে মাস দুই আগে যখন বাড়ি গেছিল। আকাশ থেকে পড়ে পরিবার। তারপর তাদের বিস্ময় থামেনি, চলে তাদের সামনেই মেয়েকে মারধর। দিদি কথা বলতে যাওয়ায় দিদি পূজাকেও মারধর করে আটকে রাখে এক রাত এক দিন, সঙ্গে সাড়ে চার বছরের ছোট ছেলে। পাড়ার দশবারো জন লোক মিলে কোনমতে ছাড়িয়ে আনতে আনতে পরের দিন রাত। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করতে যাওয়ায় দমদম ফাড়ির পুলিশ বন্দনার জামাইবাবুকে নিয়ে সোজা চলে যায় ওই বাড়ি, কিসব কথাবাত্রার পর এদের এসে বলে তোমাদের মেয়ে চুরির দোষ মেনে নিয়েছে, এখন বাচতে চাও তো এরা যা বলছে সব মেনে নাও। দেড় লাখ টাকা এনে দাও আর মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাও। নাহলে মেয়েকে এদের হাতে তুলে দাও, কোন যোগাযোগ করতে আর যেও না আর এরপর থানায় বিরক্ত করতে আসলে এখানেও মার খাবে।
পূজারা এরপর পাড়ার ক্লাব, পার্টির মহিলা সমিতি, এলাকার ছোটবড় দাদা সবার কাছে গেছিল সাহায্যের জন্য; কিন্তু ভোটের মরশুমে লাভের আশা না থাকায় পাত্তা দেয়নি কেউই। আমরা যারা বাসন্তি কলনিতে ‘অন্য আকাশ’ সংগঠনের মধ্যে দিয়ে পড়ানোর কাজ করি, অসংগঠিত শ্রমিক মেয়ে-পুরুষ দের সংগঠিত ও শক্তিশালী করার কাজ করি, আমরা বিষয়টা জানতে পারি দিন দশেক আগে। তারপর থেকে ছোটাছুটি শুরু। পুলিশ বিষয়টায় যুক্ত, তাই প্রথমে CWC (Child Welfare Committee) যারা দশদিনেও কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি আর তারপর ব্যরাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। বড়বড় অফিসারদের দেখা পাওয়া মুশকিল, তাই একবারের জায়গায় ২,৩ বার গিয়ে শেষে কাল কমিশনারেটের চিঠি নিয়ে দমদম থানায় অভিযান করেছিলাম আমরা। সঙ্গে বাসন্তী কলনির জনা চল্লিশেক কাজের মেয়ে। পুলিশের সমস্ত চোখরাঙানি ভঙ্গ করে বন্দনা কাল মায়ের কাছে ফিরেছে। এবার দেখার দমদমের ওই পরিবারকে কিভাবে Bonded labor abolition act এ জেলের ঘানি টানানো যায় আর ক্ষতিপুরণ আদায় করা যায়।
কারণ শুধু বন্দনা নয়, ওই বাড়িতে কাজ করে আরো তিনটি মেয়ে, নানা বয়েসের। বন্দনার মুখেই শুনলাম আর কাল আমাদের বন্ধুরা চাক্ষুস দেখেও এসেছে বন্দনার থেকেও ছোট একটি মেয়ের আরো করুণ অবস্থা। আর আমরা এও জানি গৃহশ্রমিক মেয়েদের জন্য কোন সুরক্ষার ব্যবস্থা এখনো করতে পারেনি এরাজ্যের সরকার। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ ILO স্বীকৃতি সত্ত্বেও এই কাজের মেয়েদের এখনও শ্রমিক হিসেবে স্বীকার করেনি। অথচ আমাদের দেশে পরিষেবা ক্ষেত্রে যত মেয়ে কাজ পায়, তার দ্বিতীয় স্থানেই রয়েছে গৃহশ্রমিকের কাজ। এখনো তাদের বেশীরভাগই ঘণ্টায় ২০ টাকা মজুরির নিচে আমাদের মত মধ্যবিত্ত/উচ্চবিত্ত বাড়িগুলোতে কাজ করে। হাতে হাজা, হাটুতে ঘা, বাত নিয়ে। মাসে ৪ দিন ছুটিও জোটেনা (বড়জোর দুদিন) অনেকেরই। অসুস্থ হয়ে একদিন কাজে না গেলে মাইনে কাটা যায়। তারপর জল খেতে দেবেনা, বাথরুমে যাওয়া বারন, এমনকি থালার বদলে প্লাস্টিকে জলখাবার জোটে বেশীরভাগ নোংরা-ময়লা এইসব কাজের মেয়ের। জোটেনা কোনরকম সরকারি সুরক্ষা। পুরোটাই পয়সাওয়ালা চাকরিজীবী বাড়িগুলোর দয়াদাক্ষিণ্যে চলে এদের জীবন। তারপর উপরি পাওনা এই চুরি ছিনতাইয়ের তখমা আর শ্রাবণী সাহাদের মত মানুষদের টাকার লোভ আর জল্লাদ মানসিকতা। আর কোন পার্টি, কোন থানা, কোন ভদ্দরলক কি বিশ্বাস করবে এদের! কারণ ‘ছোটলোক’দের তো জন্ম তখমা চোর-ছ্যচরের। অথচ এরকম ঘটনা ঘটছে ভুরি ভুরি, খবরের কাগজেও তার উদাহরণ মেলে মাঝে মধ্যে। এই ঠিকে কাজে নেওয়ার সাথেই যুক্ত আছে বেশিরভাগ মেয়ে পাচার চক্র। সব সরকার, সব এনজিও জানে বোঝে। সিস্টেম এভাবেই চলে।
আগামী ১৬ই জুন ILO স্বীকৃত ‘আন্তর্জার্তিক গৃহশ্রমিক দিবস’। ২০১১ সাল থেকে পালিত হয়। আমাদের দেশের সেরকম কেউ জানেনা। ওইদিন টায় সকলে মিলে জড় হয়ে আলোচনা করা যায় একটা উপায় বাতলানোর। নতুন সরকার শপথ নিয়েছে গত পরশু। নতুন মরশুমে সকলে মিলে সংগঠিত হয়ে তাদের ওপর চাপ দেওয়া যায় কিভাবে ‘শ্রমিক স্বীকৃতি-ন্যূনতম মজুরি-ওয়েলফেয়ার বোর্ড’ এর দাবীতে সেটাই দেখার। যারা ভেবেছেন এই গৃহশ্রমিক মেয়েদের নিয়ে কাজ করার বা তাদের সংগঠিত করার বা ইউনিয়নাইজ করার কথা তাদের আমন্ত্রণ রইল আলোচনায় সামিল থাকার জন্য।






No comments:

Post a Comment