Saradindu Uddipan
আদি ধরম, সারি ধরম বা সারি সারনাঃ
বর্তমান যুগের স্বনামধন্য ভাষাতত্ত্ববিদরা স্বীকার করে নিয়েছেন যে, মুন্ডা, কোল (সাঁওতালী) প্রভৃতি মানুষের মুখের ভাষাই আদিভাষা। এরাই মানব প্রজাতির আদিম প্রতিনিধি। বিবর্তনের স্রোত ধরে প্রকৃতির সাথে নিরন্তর আদান প্রদান ও সহাবস্থানের ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত থেকে এই আদিম পিতামাতারাই মানব সভ্যতার ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। প্রকৃতির সাথে নিরন্তর মিথোস্ক্রিয়ার ফলে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানভান্ডারের সাহায্যে এক সুষম সহাবস্থানের নীতি গড়ে তুলেছিলেন তারা। অনাদি কাল থেকে শুরু হওয়া এই মিথস্ক্রিয়ার কোন স্রষ্টা নেই। এটা সম্মিলিত জ্ঞানের ফসল। প্রকৃতির মধ্যে নিজেদের অবস্থান চিহ্নিত করা, নিজেদের আচার আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে তাকে প্রয়োগ করার বিধি ও বিধানগুলি আদি ওস্ট্রিক/ কোলিড ভাষায় আদিধরম, সারিধরম বা সারিসারনা নামে পরিচিত। সারিসারনা প্রকৃত অর্থ “ সত্য সনাতন ধর্ম”। সনাতন শব্দটিও প্রাচীন অস্টিক শব্দ। সকলের কল্যাণে “ধারতিমাতা”র মূর্ত, বিমূর্ত চেতন, অচেতন পদার্থের মধ্যে নিজেদের সম্বন্ধ নির্ণয়, আত্মীয়তা অনুভব এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পারস্পরিক সহাবস্থানই এই ধর্মের মূল বাণী। ভাদর মাসের পার্শ্ব একাদশীতে যে “করম” উৎসব পালিত হয় তার মূল বিন্তি (ভাষ্য) “কুরম- ধুরমু”র লোক কাহিনীতে এই ধর্মের বিষদ বিবরণ রয়েছে। এই লোক কাহিনীতে দেখান হয়েছে যে প্রতিটি জীব জগতের সাথে মানুষের এক নিবিড় আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে এবং এই পারস্পরিক সম্পর্কের ভিত্তিতেই গড়ে উঠেছে বন্ধুত্বপূর্ণ স্থিতিশীল সমাজ।
মানব সভ্যতার বিভিন্ন বাঁকে এসে যুগপুরুষেরা ও মহামানবেরা এই অনন্ত ধারার স্বরূপ নির্ধারণ করার চেষ্টা করেছেন, কাল অনুযায়ী নাম দেবার চেষ্টা করেছেন। সারি সারনার মূল বানীকে অনুসরণ করে মহামতি গোতমা প্রচলিত বৌদ্ধিক দর্শনে তিনটি সরণী, সারণা বা মার্গের সমাহার গড়ে তুলেছিলেন, যা বুদ্ধ দর্শনে ত্রিসারণা বা ত্রিসরণ নামে পরিচিত। এই ত্রিসরণ হল, “বুদ্ধম সরণম গচ্ছামি, ধম্মম সরণম গচ্ছামি, সঙ্গম সরণম গচ্ছামি”।
আর্যিকরণ বা সংস্কৃতায়ণের কালেই ব্রাহ্মণ সমাজ “সারিধরম”কে অনুকরণ করে একটি স্বধর্ম সংস্থাপনে ব্রতী হয়েছিলেন কিন্তু বেদাচারের মূল নীতি অর্থাৎ শিকার-সংগ্রহের মূল বৃত্ত থেকে তারা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়নি। ফলে ধর্ম, অর্থ, কামকেই তারা মূল মোক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেন এবং গীতার রচনাকালে সেই বেদাচারের নিতিকেই পাথেয় করে তারা সাধুর পরিত্রাণ ও দুষ্কৃতির বিনাশের মাধ্যমে তাদের ধর্মের প্রাচীন ধারাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন।
এতে সুবিধা হয়েছে ভাবীকালের গবেষকদের। চিহ্নিত করতে সুবিধা হয়েছে ভারতীয় মূল ধারা এবং আর্য ধারার মৌলিক পার্থক্য। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসা সারি সারনাধরমের “করম বিন্তি” নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করে দিয়েছে যে, সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ব্রাহ্মন্য সাহিত্যগুলি যে দাবী করে আসছিল তার কোন ভিত্তি নেই। আধুনিক কালের এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান থেকেও নির্ণীত হচ্ছে যে বিপুল পরিমাণের এই ব্রাহ্মন্য সাহিত্যের মধ্যে তেমন কোন বিশ্বাসযোগ্যতা নেই যা ব্রাহ্মণ সমাজ বারবার দাবী করে আসছে। তেমন কোন সারবত্তা নেই যা সকলের হিত ও মঙ্গল সাধনা করতে পারে। বরং এই সাহিত্যের মাধ্যমে সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে, ধোকা দেওয়া হয়েছে। মোক্ষ, পরম ও স্বর্গ প্রাপ্তির লোভ দেখিয়ে সমস্ত মানুষকে ব্রাহ্মনের পবিত্র গোলামে পরিণত করা হয়েছে। ব্রাহ্মন্য সাহিত্য আসলে ডিভাইন প্রভূদের গোপন দস্তাবেজ। এক বিশাল সংখ্যক জনপুঞ্জের উপর মুষ্টিমেয় ক্ষমতালোভী মানুষের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তার করা এবং তাকে মজবুত করার একটি দুর্লঙ্ঘ সামাজিক ও রাজনৈতিক সংবিধান। ধর্মের মোড়কে এই গোপন দস্তাবেজকে মানুষের আচার আচরণের মধ্যে চালান করে দেওয়া হয়েছে যাতে ব্রাহ্মণ সমাজ বংশ পরম্পরায় বর্ণশ্রেষ্ঠ হিসেবে দুধে ভাতে প্রতিপালিত হতে পারে। (মূল রচনা "সনাতন বিচার ধারা" থেকে অংশ বিশেষ)
This comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteextremly true .but how many people accept this truth...
ReplyDeleteহিন্দু ধর্ম বলে কোন ধর্ম কোনকালে ছিল না ৷ আসল ধর্ম হল সনাতন ধর্ম ৷ হিন্দু একটি চতুর এবং ভিক্ষুক একটি যাতি অথবা গৌষ্ঠীর নাম ৷ গীতায় কোথাও হিন্দু ধর্মের কথা বলা নেই ৷ কেবল সনাতন ধর্মের কথা বলা আছে ৷ চতুর হিন্দুরা সেটাকে প্রকাশ করে না ৷
ReplyDeleteএই কারনে তারা সমাজে ভিক্ষাবৃৃৃৃৃত্তির সূচনা করেছিল Brahmin গোষ্ঠির ষষ্টিপূজা চালানোর জন্য ৷ এরা এতটাই আহাম্মক পূজাকরার জন্যও এরা নিজের ট্যাক খসিয়ে পূজো করতে পারে না ৷ অন্যের কাছে টাকা চায় ৷ এভাবেই তো এরা সমাজে আধিপত্য কায়েম করেছিল ৷
ReplyDeleteসনাতন ধর্মকে এরা কলুশিত করেছিল ৷ জানি না এখন এরা গড়ুরপুরান মতে নরকের ঘানি টানছে কি না ??
ReplyDeleteএই এত বছর হয়ে গেছে যুগ পেরিয়ে গেল ভারতবর্ষে আজও আদিবাসিরা সমান বঞ্চিত ৷ নেয্য কথা বলেছ কি বিপদ ৷
ReplyDelete