মাওলানা নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া অব্যাহত
- বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে- হাফিংটন পোস্ট
- মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী- রাইটার ইউনিয়ন অফ টার্কি
- জামায়াতে ইসলামের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে- মালয়েশিয়ার পাস
- মাওলানা নিজামী সত্যিকারের একজন ইসলামিক নেতা- কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদিন
সামছুল আরেফীন : বিশ্বব্যাপী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদন্ডের নিন্দা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন ব্যক্তি, আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম ও সংগঠন বলছে, অস্বচ্ছ ও অন্যায্য প্রক্রিয়ায় মাওলানা নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। এতে দেশে রাজনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। তারা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
দ্যা হাফিংটন পোস্ট: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ৫ম ব্যক্তি যাকে, ১৯৭১ সালে সংগঠিত অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলো। কিন্তু বিচারের পুরো প্রক্রিয়ায় ছিল অস্বচ্ছতা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি।
গত শুক্রবার হাফিংটন পোস্টে লেখা এক নিবন্ধে আর্ন্তজাতিক আইনজ্ঞ ব্যারিস্টার টবি ক্যাডম্যান। দীর্ঘ নিবন্ধে তিনি বলেন, নিজামী হচ্ছেন বাংলাদেশের অন্যতম বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর প্রধান। তিনি দুইবার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০১-২০০৬ সালে ২টি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব করেন। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় এবং সুপ্রীম কোর্ট তা বহাল রাখে।
তিনি বলেন, ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুরো প্রক্রিয়াটি করা হয়নি। এ বিষয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পূর্বেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ, বিচারক ও একাডেমিক ব্যক্তিবর্গ তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিলেন। তারা বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
নিবন্ধে টবি বলেন, বিচার প্রক্রিয়ার অন্যায্যতা শুধুমাত্র সাক্ষ্য প্রমাণ ও আইনী বিশ্লেষণের কিছু ঘাটতির কারণেই নয়, এখানে মৌলিক অধিকার অবদমন করা হয়েছে। নিজামীর মামলার ক্ষেত্রে দুইপক্ষকে সমান সুযোগ দেয়া হয়নি। প্রসিকিউশন যেখানে প্রস্তুতির জন্য ২২ মাস সময় পেয়েছিল, সেখানে ডিফেন্সকে দেয়া হয়েছিল ৩ সপ্তাহ, প্রসিকিউশন যেখানে ২৬ জন সাক্ষী আনতে পেরেছিল, সেখানে ডিফেন্সকে দেয়া হয়েছে ৪জন। তিনি মামলার নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেন। এ কারণেই জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার আহ্বান জানিয়েছিল। তারা বলেছে, এই বিচার প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী স্বচ্ছ ও যথার্থ প্রক্রিয়া অনুযায়ী হয়নি।
নিবন্ধে বলা হয়, দু:খজনকভাবে বাংলাদেশ সরকার সকল অনুরোধ ও সমালোচনা উপেক্ষা করে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। বাংলাদেশে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে। যথার্থ প্রক্রিয়া ছাড়া, অধিকার নিশ্চিত করা ছাড়া, প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রেখেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শামিল। এতে আরো উল্লেখ করা হয়, পুরো বিচার প্রক্রিয়া, বিশেষ করে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংকট ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে।
অধিকন্তু সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে কঠোরভাবে দমন করছে এবং খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-, গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তা এখন হুমকির মুখে।
রাইটার ইউনিয়ন অফ টার্কি: তুরস্কের রাইটার ইউনিয়ন অব টার্কি এক বিবৃতিতে বলে, স্কলার মতিউর রহমান নিজামীকে অন্যায্য বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। রাইটার ইউনিয়নের বোর্ড অব ডিরেক্টর্স এর পক্ষ থেকে এই বিবৃতি দেয়া হয়।
আমরা জোর দিয়ে বলছি, ধর্মবিশ্বাসের স্বাধীনতা ও তার প্রচারে বাধা দেয়া পৃথিবীর কোন দেশেই কোনভাবে বাধা দেয়া উচিত না। আমরা মনে করি, এই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিপন্থী।
আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি, এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজের যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়।
আমরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করি, তার শাহাদাত যেন কবুল করেন এবং শোক প্রকাশ করছি তার পরিবার ও তার সহকর্মীদের প্রতি, সর্বোপরি মানবতা ও মুসলিম বিশ্বের প্রতি।
মালয়েশিয়ার পাস: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে মালয়েশিয়ার ইসলামিক রাজনৈতিক দল ’পার্টি ইসলাম সে মালয়েশিয়া’ সংক্ষেপে ’পাস’।
পার্টির সভাপতি আব্দুল হাদি আওয়াং এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের ইসলামিক নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ওপর যে অবিচার করা হয়েছে তার নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, পাস পার্টি দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ জানায়। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে যেভাবে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ জনাই।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নিজামীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে দেখা যায়, দেশটির সরকারি দল তাদের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে এসব ইসলামিক নেতাদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছে এবং হত্যা করছে।
তিনি বলেন, পাস পার্টি আশা করে, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলাম ধৈর্য্যরে সঙ্গে এসব পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাবে। এছাড়াও পাস নিজামীর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
ইসলাম রক্ষা করতে জামায়াতে ইসলামীর ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানায় দলটি।
কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদিন: মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন কাশ্মীরের হিজবুল মুজাহিদিনের প্রধান সাইয়্যেদ সালাহউদ্দিন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মতিউর রহমান নিজামী ছিলেন একজন সত্যিকারের ইসলামী নেতা।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে ইসলামপন্থী প্রখ্যাত নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থে ভারতের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়েছে এবং এটা মুসলিম বিশ্বের জন্য একটা হুমকি। তিনি বলেন, ভারত কাশ্মীরকে একটি কারাগারে পরিণত করেছে। (গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের মতো) বহিরাগতদেরকে কাশ্মীরে বসতি স্থাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে। ভারত একই সাথে কাশ্মীরে মুসলিম পরিচয়কে পরিবর্তন করে দিতে কাজ করছে আর অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ ধর্মীয় নেতাদেরকে হত্যা করছে।
তুরস্কের হারুন ইয়াহিয়া: তুরস্কের ইসলামী চিন্তাবিদ হারুন ইয়াহিয়া এক টুইট বার্তায় বলেন, মহান আল্লাহ মাওলানা নিজামীর শাহাদাত কবুল করুন এবং তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন করুন।
তিনি বিজ্ঞান ও ধর্মীয় বিষয়ে ৩০০-এরও অধিক বই লিখেছেন।
No comments:
Post a Comment