তলায় তলায় আর এস এস এর সংখ্যাবৃদ্ধির একটা প্রতিফলন যেমন বিজেপির ভোটবৃদ্ধি, ঠিক তেমনি জনচেতনাতে ধর্মীয় মেরুকরণের আভাসও বটে।
সবশেষে, নির্বাচনী হিংসার যে আবহ সারা রাজ্যে শুরু হয়েছে, তীব্র ধিক্কার জানাই তাকে...
লড়াই জারী থাকুক...
জয় ভীম, লাল সেলাম...
নির্বাচনের পালা সাঙ্গ হয়েছে আজ ৩ দিন হল; কয়েকটা কথা বলা দরকার, তাই একটু দেরীতে হলেও লিখছি। পরিসংখ্যানের কচকচিতে যাবোনা, ও নিয়ে বাজারী থেকে সোশ্যাল, দুই মিডিয়াতেই প্রচুর বিশ্লেষণ হয়েছে, কে কোথায় কাকে কীভাবে জিতিয়েছে বা হারিয়েছে, তলায় তলায় সম্ভাব্য কতরকমের আঁতাত কী কী ভাবে কাজ করেছে, সে বিবরণী আপাতত তোলা থাকুক।
প্রথমে বলি বিজেপি'র কথা... এ'রাজ্যে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি নিয়ে সত্যিতেই সাবধানী হওয়ার প্রয়োজন; কারণ তলায় তলায় আর এস এস এর সংখ্যাবৃদ্ধির একটা প্রতিফলন যেমন বিজেপির ভোটবৃদ্ধি, ঠিক তেমনি জনচেতনাতে ধর্মীয় মেরুকরণের আভাসও বটে। উল্লেখযোগ্য,মালদার বৈষ্ণবনগরে বিজেপির জয় একদম উত্তরপ্রদেশ মডেলের ক্ষুদ্র অনুকরণ বললে খুব ভুল হবেনা বোধহয়; শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের মননেও যেভাবে একটা ডানপন্থী সরণের সাধারণ বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে,আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে যেভাবে গেরুয়া বাহিনীর পেশী আস্ফালন বাড়ছে প্রকাশ্যে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে বিজেপির জনসমর্থন (শুধু প্যাসিভ জনসমর্থন নয়) বাড়ার সম্ভাবণা প্রবল। (প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় একচ্ছত্রভাবে আসার মাত্র ৪ বছর আগেও নাজিদের ভোট মোট ভোটের ১০% এরও কম ছিল)। অতএব পালটা লড়াই (নির্বাচনী নয়) এর কথা মাথায় রাখা দরকারী।
তৃণমূল নিয়ে প্রচুর কিছু বলার নেই; পাইয়ে দেয়ার রাজনীতির যে ব্লুপ্রিন্ট বাম আমলে তৈরী হয়েছিল, তারই তুলণামূলকভাবে আরেকটু জনমোহিনী রূপ বিপুল ভোটে মসনদে ফেরালো মমতাকে; আগামী ৫ বছরে আরো আরো দলতন্ত্রের নজির,আরো দুর্নীতি,আরো বেশী বেশী একুশে আইন, জনমোহিনী নীতির আড়ালে 'উন্নয়ন' এর বুলডোজার ইত্যাদি ইত্যাদির জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন রইল। জাতীয় স্তরেও যেভাবে মোদী মমতা সখ্যের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, সেটাও আশঙ্কারই বিষয়। তবে দুটি বিষয় বেশ সমস্যার বলে মনে হয়। এক, তৃণমূল জেতার পরে যেভাবে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শহুরে বাঙ্গালীর একটা অংশ (বাম ও অবাম, দুই'ই) 'অশিক্ষিত' 'চোরের দল' ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তৃণমূলকে হ্যাটা করতে শুরু করলেন(আগে করতেন না এমন নয়, তবে এমন সম্মিলিত প্রকাশ্য বয়ান আগে প্রচুর দেখেছি এমন না) , তাতে করে 'শিক্ষিত' বাঙ্গালীর 'এলিটিজম' এর অহঙ্কার ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ পায় না; এ'জিনিস যদিও নতুন নয়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে!! আর ঘোষিতভাবে বামপন্থী (অবশ্যই 'শিক্ষিত', 'মধ্যবিত্ত', 'শহুরে', 'সরকারী' বাম) দের এ'নিয়ে সম্মিলিত খেউড় সত্যিতে সরকারী বামপন্থার শ্রেণী অবস্থানকেই আরো স্পষ্ট করছে বই নয়। আবার অন্যদিকে আরেকটা অংশের বুদ্ধিজীবী কিছু মানুষ যেভাবে তৃণমূলকে 'সাবঅল্টার্ন'দের একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করে 'অতএব ইহারাই গরীবের সহীহ দল' বলে ফতোয়া জারী করে উত্তরাধুনিক ঢেকুর তুলছেন, সেটাও সমান আশঙ্কার।
জোটের রসায়ন যে কাজ করেনি, সেটা না বলে দিলেও চলে... সিপিআইএম নেতৃত্ব যেভাবে কর্মী সমর্থকদের ক্ষমতাজয়ের খোয়াব দেখিয়েছিলেন, এই ফলাফলের পর তারা কী ভাবছেন জানার আগ্রহ আছে। তবে কীনা 'শ্রেণীসংগ্রাম' এর কথা তো 'কমরেড'রা আজো অন্তত মুখে বলেন বলেই জানি, 'শ্রেণী' টাকে নাহয় বাদ দিলাম, নিদেনপক্ষে কোন নাগরিক ইস্যু নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গত ৫ বছরে ওনারা করেছেন জানার ইচ্ছে রইল। আর রাস্তায় না নেমে (দু'একবার নেমেছেন বটে, ৩৪ বছরের দীর্ঘ অনভ্যেস ভুলে, তবে ৫ বছরে গুণে দেখলে সেটা ১০ দিন হবে কীনা সন্দেহ, আর তার আনুষ্ঠানিকতা বাদে অন্য সংগ্রামী কোনো ধরণ চোখে পড়েনি মোটেই) শুধু 'জোট' এর অঙ্ক আর 'মিডিয়া'র ধুন্ধুমার প্রচারের কল্যানে তারা বেরিয়ে যাবেন,এই দিবাস্বপ্ন কীভাবে দেখলেন, সত্যিতেই কৌতূহল জাগায়। ফলে সংগ্রামী এবং স্পষ্ট শ্রেণী অবস্থান নেয়া বামপন্থার মেরুকরণের আশু প্রয়োজন রয়েছে (সে কাজ সি পি আইএম বা বামফ্রন্টের অন্যান্য দলগুলি করবে, সে আশা অবশ্য দিবাস্বপ্নের সামিল)।
তবে এবারের ভোটে সবথেকে 'বড়া খিলাড়ী' বাজারী মিডিয়া। বাঙ্গালীর মগজকে নাইয়ে খাইয়ে শুকুতে দেয়া বাজারী মিডিয়া যেভাবে ভোট ভাগ্যকে গড়ে দেবার খেলায় নেমেছিল, তা একদিক থেকে আশঙ্কাজনকই বটে (মিডিয়ার একইধরণের ভূমিকা মোদীর ক্ষমতায় আসা থেকে জে এন ইউ নিয়ে অর্নব গোস্বামীর নাচনকোদন, সর্বত্র দেখা যাচ্ছে, জনমতকে শাসকের ইচ্ছেমত তৈরী করার খেলাও বলা চলে এটাকে)। যদিও বা এই নির্বাচনে তাদের পরিকল্পনামাফিক ফলাফল হয়নি, কিন্তু এই ট্র্যাডিশন বাড়বে বই কমবে বলে মনে হয়না। সমস্যাটা হল, 'গণতন্ত্রে'র অন্য সব কাঠামোই কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে সাধারণ মানুষের কাছে উত্তর দিতে বাধ্য, অন্তত একটা দূর পর্যন্ত (উত্তর দিতে না চাইলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার রাস্তাও আছে)। অথচ কর্পোরেট মিডিয়ার সেই দায়বদ্ধতার জায়গাটাই নেই; সচেতন হবার প্রয়োজন সেদিকে, প্রয়োজন কর্পোরেট মিডিয়ার 'ন্যায্যতা তৈরী'র রাজনীতির বিরুদ্ধেও সংগ্রাম গড়ার।
প্রথমে বলি বিজেপি'র কথা... এ'রাজ্যে বিজেপির ভোট বৃদ্ধি নিয়ে সত্যিতেই সাবধানী হওয়ার প্রয়োজন; কারণ তলায় তলায় আর এস এস এর সংখ্যাবৃদ্ধির একটা প্রতিফলন যেমন বিজেপির ভোটবৃদ্ধি, ঠিক তেমনি জনচেতনাতে ধর্মীয় মেরুকরণের আভাসও বটে। উল্লেখযোগ্য,মালদার বৈষ্ণবনগরে বিজেপির জয় একদম উত্তরপ্রদেশ মডেলের ক্ষুদ্র অনুকরণ বললে খুব ভুল হবেনা বোধহয়; শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের মননেও যেভাবে একটা ডানপন্থী সরণের সাধারণ বাতাবরণ দেখা যাচ্ছে,আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে যেভাবে গেরুয়া বাহিনীর পেশী আস্ফালন বাড়ছে প্রকাশ্যে, তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে বিজেপির জনসমর্থন (শুধু প্যাসিভ জনসমর্থন নয়) বাড়ার সম্ভাবণা প্রবল। (প্রসঙ্গত, ক্ষমতায় একচ্ছত্রভাবে আসার মাত্র ৪ বছর আগেও নাজিদের ভোট মোট ভোটের ১০% এরও কম ছিল)। অতএব পালটা লড়াই (নির্বাচনী নয়) এর কথা মাথায় রাখা দরকারী।
তৃণমূল নিয়ে প্রচুর কিছু বলার নেই; পাইয়ে দেয়ার রাজনীতির যে ব্লুপ্রিন্ট বাম আমলে তৈরী হয়েছিল, তারই তুলণামূলকভাবে আরেকটু জনমোহিনী রূপ বিপুল ভোটে মসনদে ফেরালো মমতাকে; আগামী ৫ বছরে আরো আরো দলতন্ত্রের নজির,আরো দুর্নীতি,আরো বেশী বেশী একুশে আইন, জনমোহিনী নীতির আড়ালে 'উন্নয়ন' এর বুলডোজার ইত্যাদি ইত্যাদির জন্য প্রস্তুতির প্রয়োজন রইল। জাতীয় স্তরেও যেভাবে মোদী মমতা সখ্যের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, সেটাও আশঙ্কারই বিষয়। তবে দুটি বিষয় বেশ সমস্যার বলে মনে হয়। এক, তৃণমূল জেতার পরে যেভাবে মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শহুরে বাঙ্গালীর একটা অংশ (বাম ও অবাম, দুই'ই) 'অশিক্ষিত' 'চোরের দল' ইত্যাদি ইত্যাদি বলে তৃণমূলকে হ্যাটা করতে শুরু করলেন(আগে করতেন না এমন নয়, তবে এমন সম্মিলিত প্রকাশ্য বয়ান আগে প্রচুর দেখেছি এমন না) , তাতে করে 'শিক্ষিত' বাঙ্গালীর 'এলিটিজম' এর অহঙ্কার ছাড়া অন্য কিছু প্রকাশ পায় না; এ'জিনিস যদিও নতুন নয়, সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে!! আর ঘোষিতভাবে বামপন্থী (অবশ্যই 'শিক্ষিত', 'মধ্যবিত্ত', 'শহুরে', 'সরকারী' বাম) দের এ'নিয়ে সম্মিলিত খেউড় সত্যিতে সরকারী বামপন্থার শ্রেণী অবস্থানকেই আরো স্পষ্ট করছে বই নয়। আবার অন্যদিকে আরেকটা অংশের বুদ্ধিজীবী কিছু মানুষ যেভাবে তৃণমূলকে 'সাবঅল্টার্ন'দের একমাত্র রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করে 'অতএব ইহারাই গরীবের সহীহ দল' বলে ফতোয়া জারী করে উত্তরাধুনিক ঢেকুর তুলছেন, সেটাও সমান আশঙ্কার।
জোটের রসায়ন যে কাজ করেনি, সেটা না বলে দিলেও চলে... সিপিআইএম নেতৃত্ব যেভাবে কর্মী সমর্থকদের ক্ষমতাজয়ের খোয়াব দেখিয়েছিলেন, এই ফলাফলের পর তারা কী ভাবছেন জানার আগ্রহ আছে। তবে কীনা 'শ্রেণীসংগ্রাম' এর কথা তো 'কমরেড'রা আজো অন্তত মুখে বলেন বলেই জানি, 'শ্রেণী' টাকে নাহয় বাদ দিলাম, নিদেনপক্ষে কোন নাগরিক ইস্যু নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গত ৫ বছরে ওনারা করেছেন জানার ইচ্ছে রইল। আর রাস্তায় না নেমে (দু'একবার নেমেছেন বটে, ৩৪ বছরের দীর্ঘ অনভ্যেস ভুলে, তবে ৫ বছরে গুণে দেখলে সেটা ১০ দিন হবে কীনা সন্দেহ, আর তার আনুষ্ঠানিকতা বাদে অন্য সংগ্রামী কোনো ধরণ চোখে পড়েনি মোটেই) শুধু 'জোট' এর অঙ্ক আর 'মিডিয়া'র ধুন্ধুমার প্রচারের কল্যানে তারা বেরিয়ে যাবেন,এই দিবাস্বপ্ন কীভাবে দেখলেন, সত্যিতেই কৌতূহল জাগায়। ফলে সংগ্রামী এবং স্পষ্ট শ্রেণী অবস্থান নেয়া বামপন্থার মেরুকরণের আশু প্রয়োজন রয়েছে (সে কাজ সি পি আইএম বা বামফ্রন্টের অন্যান্য দলগুলি করবে, সে আশা অবশ্য দিবাস্বপ্নের সামিল)।
তবে এবারের ভোটে সবথেকে 'বড়া খিলাড়ী' বাজারী মিডিয়া। বাঙ্গালীর মগজকে নাইয়ে খাইয়ে শুকুতে দেয়া বাজারী মিডিয়া যেভাবে ভোট ভাগ্যকে গড়ে দেবার খেলায় নেমেছিল, তা একদিক থেকে আশঙ্কাজনকই বটে (মিডিয়ার একইধরণের ভূমিকা মোদীর ক্ষমতায় আসা থেকে জে এন ইউ নিয়ে অর্নব গোস্বামীর নাচনকোদন, সর্বত্র দেখা যাচ্ছে, জনমতকে শাসকের ইচ্ছেমত তৈরী করার খেলাও বলা চলে এটাকে)। যদিও বা এই নির্বাচনে তাদের পরিকল্পনামাফিক ফলাফল হয়নি, কিন্তু এই ট্র্যাডিশন বাড়বে বই কমবে বলে মনে হয়না। সমস্যাটা হল, 'গণতন্ত্রে'র অন্য সব কাঠামোই কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে সাধারণ মানুষের কাছে উত্তর দিতে বাধ্য, অন্তত একটা দূর পর্যন্ত (উত্তর দিতে না চাইলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার রাস্তাও আছে)। অথচ কর্পোরেট মিডিয়ার সেই দায়বদ্ধতার জায়গাটাই নেই; সচেতন হবার প্রয়োজন সেদিকে, প্রয়োজন কর্পোরেট মিডিয়ার 'ন্যায্যতা তৈরী'র রাজনীতির বিরুদ্ধেও সংগ্রাম গড়ার।
সবশেষে, নির্বাচনী হিংসার যে আবহ সারা রাজ্যে শুরু হয়েছে, তীব্র ধিক্কার জানাই তাকে...
লড়াই জারী থাকুক...
জয় ভীম, লাল সেলাম...
জয় ভীম, লাল সেলাম...
No comments:
Post a Comment